আঙ্গেলা মের্কেল
এক তিরে বিদ্ধ দুই। স্পষ্ট, একলা চলার ইঙ্গিতও।
ব্রেক্সিটে অনড় ব্রিটেন, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা— কারও উপরই আর ভরসা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল।
তা হলে উপায়? গত কাল মিউনিখে এক নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মের্কেল বলেন, ‘‘নিজের ভবিষ্যত নিজের হাতে তুলে নেওয়া ছা়ড়া আর কোনও পথ নেই ইউরোপের।’’
জার্মানি তো বটেই, কার্যত গোটা মহাদেশেরই নেত্রী হিসেবে উঠে এসেছেন মের্কেল। তাঁর এই হঠাৎ তোপে অনেকে আবার অশনি সংকেতও দেখছেন। আমেরিকাকে বাদ দিয়ে ইউরোপের পক্ষে আদৌ ‘একলা চলা’ সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ব্রিটেন পা বাড়িয়েই রেখেছে।
কিন্তু মের্কেল হঠাৎ আমেরিকাকে নিয়ে পড়লেন কেন?
সেপ্টেম্বরে ফেডারেল ভোট রয়েছে জার্মানিতে। অনেকে তাই বলছেন, এ সবই ভোট টানার কৌশল। ভোটে জিতলে চতুর্থ বার জার্মানির চ্যান্সেলর হবেন মের্কেল। প্রতিকূলতার মধ্যে ইউরোপীয়দের একজোট হওয়ার কথা বলে, সেই জয়ই সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মের্কেল। প্রয়োজনে আমেরিকাকে চটিয়েও!
অথচ ইতিহাস বলছে, ১৯৪৫ থেকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানা সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন ইইউ নেতারা। কিন্তু ট্রাম্পের নাম না করেও মের্কেলের এমন মন্তব্যের জেরে তাতে ছেদ পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একাধিক বার দেখা হয়েছে মের্কেলের। জি-৭ বৈঠকে কথা হয় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়েও। যদিও তাতে নিষ্পত্তি হয়নি কিছুই। ইউরোপীয় নেতাদের দাবি, এ দফায় ফলপ্রসূ হয়নি ন্যাটোর বৈঠকও। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে ট্রাম্পই যা শুধু একতরফা তোপ দেগে গিয়েছেন বাকিদের। আগামী দিনে আমেরিকার বিদেশনীতি কী হতে চলেছে, তারও স্পষ্ট কোনও দিশা মেলেনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সদ্য শেষ হওয়া ন’দিনের বিদেশ সফরে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের দাবি, এ সবেই বিস্তর চটেছেন মের্কেল। সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ট্রাম্প যে ভাবে জার্মান-বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছেন, তা-ও কানে গিয়েছে মের্কেলের। গত কয়েক দিনের সে সব ‘অভিজ্ঞতা’ খোলসা না করেও তাই মের্কেল বলেন, ‘‘সে একটা সময় ছিল বটে, যখন আমরা অন্যদের প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা করে এসেছি। কিন্তু এখন নির্ভরতার দিন শেষ।’’ মের্কেলের এমন মন্তব্যের পর হাততালির ঝড় বয়ে যায় মিউনিখের সভায়। যার সিংহভাগই দখলে রেখেছিলেন মের্কেল-সমর্থকেরা।
আর ইমানুয়েল মাক্রঁ! ফরাসি প্রেসিডেন্ট কিন্তু এখনও ‘নাছোড়বান্দা’। ন্যাটোর বৈঠক শুরুর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বিতর্কিত সেই করমর্দন প্রসঙ্গে সম্প্রতি তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি তৈরি হয়েই গিয়েছিলাম। চাপ যে আসতে পারে, জানতাম। তাই আমার ওই আচরণ নিরীহ ভাবার কোনও কারণ নেই।’’ পরে আবার সে দিনই অন্যত্র ট্রাম্পকে এড়িয়ে মের্কেলের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় তাঁকে! ইউরোপীয় জোটের স্বার্থে সেটাও মাক্রঁ-র পূর্বপরিকল্পিত কি না, প্রশ্ন উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy