Advertisement
০৫ মে ২০২৪

উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিলে জয়ী হবে আইএস-ই, বলছে ফ্রান্স

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে এখনও ত্রস্ত ইউরোপ। শরণার্থীদের ভিড় সামলাতে কোনও রফাসূত্রের খোঁজ তো দূর অস্ত্, বরং এ বার একে অপরের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে শুরু করল ইউরোপের দেশগুলি।

হাঙ্গেরি-সার্বিয়া সীমানার কাছে শরণার্থীরা। ছবি: রয়টার্স।

হাঙ্গেরি-সার্বিয়া সীমানার কাছে শরণার্থীরা। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস ও ব্রাসেলস শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৪
Share: Save:

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে এখনও ত্রস্ত ইউরোপ। শরণার্থীদের ভিড় সামলাতে কোনও রফাসূত্রের খোঁজ তো দূর অস্ত্, বরং এ বার একে অপরের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে শুরু করল ইউরোপের দেশগুলি।

ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করতে আজ প্যারিসে ৬০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসে ফরাসি প্রশাসন। ছিলেন ইরাক, জর্ডন, তুরস্ক, লেবাননের প্রতিনিধিরাও। শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ আগেই বলেছিলেন, শরণার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকলে ইউরোপের শেঙ্গেন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তবে আজকের বৈঠকে আরও এক ধাপ গলা চড়িয়ে ফরাসি কূটনীতিকরা জানান, সিরীয়দের আশ্রয় দেওয়া মানে, পশ্চিম এশিয়ায় আইএস-এর আধিপত্য মেনে নেওয়া। ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লরেন ফ্যাবিয়াসের কথায়, ‘‘ইউরোপ বা অন্য যে কোনও জায়গায় শরণার্থীরা যান না কেন, মোদ্দা ব্যাপার হল, ইরাক-সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিরা সফল হয়েছে।’’ পাশাপাশি তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ার মানুষকে দেশছাড়া করাটাই সমস্যা। ইউরোপে তাঁদের আশ্রয় দেওয়া কোনও সমাধান নয়।

এ দিকে, জার্মানি বেনজির ভাবে শরণার্থীদের গ্রহণ করলেও শক্ত হাতে ভিড় সামলাচ্ছে হাঙ্গেরি। সংবাদমাধ্যম ও রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য বলছে, সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি গ্রিসে, বিশেষত লেসবোসে। ‘মানুষের চাপে এ বার ফেটে পড়বে লেসবোস’— টেলিভিশনকে জানান লেসবোস প্রশাসন। টানা তিন দিন ধরে পুলিশ-শরণার্থী খণ্ডযুদ্ধে উত্তাল লেসবোস।

এক ধ্বংসস্তূপ থেকে পালিয়ে আর এক ধ্বংসস্তূপে এসে পৌঁছলাম— গ্রিসের নানা দ্বীপে ছেয়েছে এমনই প্ল্যাকার্ডে। ডিঙিনৌকোয় ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গ্রিসে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে তিন দিন ধরে খণ্ডযুদ্ধ চলছে পুলিশের। প্রশাসন বলছে, তিল ধারণের জায়গা নেই রাস্তাঘাটেও। উদ্বাস্তুদের জায়গা দেওয়ার মতো অবস্থাও নয় দেশের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য জানাচ্ছে, শুধু লেসবোসেই এখনও আটকে হাজার তিরিশ মানুষ। গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ মিলিয়ে আরও হাজার কুড়ি! আর ভূমধ্যসাগরে শ’য়ে শ’য়ে নৌকার সারি। কাল রাতে লেসবোসের প্রধান বন্দরে আড়াই হাজারেরও বেশি শরণার্থীকে আটকায় সশস্ত্র পুলিশ। জোর করে আথেন্স যাওয়ার বন্দরে যেতে চাইলে শরণার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের।

জার্মানির উদ্বাস্তু-অভ্যর্থনা নীতি নিয়ে তোপ দাগার পর শরণার্থীদের ঠেকাতে কঠিন হয়েছে হাঙ্গেরির প্রশাসনও। সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তে আজ সারা দিনই মোতায়েন ছিল সশস্ত্র পুলিশ। সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কাউকে। প্রশাসন জানিয়েছে, বুদাপেস্ট-সহ হাঙ্গেরির প্রধান শহরগুলোয় ক্রমশ বাড়ছে ভিড়। হাঙ্গেরির সীমান্ত পেরোনোর আশায় সপরিবার মাইলের পর মাইল হাঁটতে শুরু করেছেন শ’খানেক শরণার্থী। শীতে পথে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। জার্মানি যেতে চাইলেও সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ। প্রশাসন বলছে, আশ্রয় শিবিরে গিয়ে প্রাথমিক নথি তৈরি না করলে সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হবে না কাউকে।

জার্মানিও সমাধান সন্ধানের আর্জি জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে। শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ঘোষণা নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে সুর চড়িয়েছে আঙ্গেলা মের্কেলের প্রশাসনও। জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েলের মতে, জার্মানির অর্থনীতি এতই মজবুত যে প্রয়োজনে বছরে ৫ লক্ষ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিতেই পারে প্রশাসন। পাশাপাশি, ইউরোপের বাকি দেশের কর্তব্যের প্রশ্নও তুলেছেন।

সঙ্কট মোকাবিলায় কুড়ি হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে রাজি হলেও ব্রিটেন জানিয়েছে, নাগরিকত্বের জন্য আশ্রিতদের আবার আবেদন করতে বলা হতে পারে। আর আশ্রিত শিশুদের বয়স ১৮ পেরোলে তাদের দেশে ফেরানোও হতে পারে। ডেনমার্ক জানিয়েছে, সেখানে আশ্রয় চাইতে হলে আগে শিখতে হবে ড্যানিশ।

চাপানউতোরে যে সমস্যা কমবে না, জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। একই মত হিলারি ক্লিন্টনেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE