Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্বীর আড়ালে প্রশ্ন, লাভের গুড় কতটা

বেজিং সফরের সময়ে ‘টেম্পল অব হেভন’-এর সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে লি খ্যছিয়াং ও নরেন্দ্র মোদী। চিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই নিজস্বী টুইটারে ছড়ানোর পরেই ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে শব্দটি। ‘নিজস্বী কূটনীতি’। মোদীর এই ‘নিজস্বী কূটনীতি’তে কতটা সাফল্য এল, তা জানতে অবশ্য সময় লাগবে, বলছেন কূটনীতিকেরা।

‘টেম্পল অব হেভন’-এর সামনে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের সঙ্গে নিজস্বী তুলেছেন। টুইটারে এই ছবিটিই পোস্ট করেছেন মোদী।

‘টেম্পল অব হেভন’-এর সামনে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের সঙ্গে নিজস্বী তুলেছেন। টুইটারে এই ছবিটিই পোস্ট করেছেন মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

বেজিং সফরের সময়ে ‘টেম্পল অব হেভন’-এর সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে লি খ্যছিয়াং ও নরেন্দ্র মোদী। চিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই নিজস্বী টুইটারে ছড়ানোর পরেই ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে শব্দটি। ‘নিজস্বী কূটনীতি’। মোদীর এই ‘নিজস্বী কূটনীতি’তে কতটা সাফল্য এল, তা জানতে অবশ্য সময় লাগবে, বলছেন কূটনীতিকেরা। তবে আতিথেয়তা যতই পরিপাটি হোক, হাসিহাসি মুখের যৌথ নিজস্বী ছড়িয়ে পড়ুক নেট দুনিয়ায়, আপাত ভাবে কিন্তু মোদীর এই চিন সফর উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য এনে দিল, এমন কথা এখনই বলতে পারছেন না ভারতীয় কূটনীতিকরা। বেজিংয়ে ‘মোদী যাদু’ মাত করে দেবে, এমন আশাও অবশ্য করছিলেন না তাঁরা। তবে ভারতের বক্তব্যে বেজিং এ বার অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে— নয়াদিল্লির তরফে এটাকেই সাফল্য হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

সীমান্ত বিরোধ মেটানোর পথে কি খুব একটা এগোতে পারল দু’‌দেশ? প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) মতানৈক্যের প্রশ্নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মোদী। কিন্তু বেজিংয়ের তরফে অবশ্য তেমন কোনও আশার কথা শোনানো হয়নি। ভারতের জন্য বড় মাপের কোনও বিনিয়োগের আশাও কি উজ্জ্বল হয়ে উঠল মোদীর এই সফরে? উত্তরটা এ ক্ষেত্রেও বিশেষ আশাপদ বলে দাবি করতে পারছেন না ভারতীয় কূটনীতিকদের একটি অংশ।

নিজস্বীর ওই হাসি তবে কতটা সত্য? মোদী সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বচ্ছন্দ হলেও আবেগের প্রকাশে খুব একটা অভ্যস্ত নন চিনা কমিউনিস্ট নেতারা। ইদানীং অবশ্য সেই ধারা কিছুটা বদলেছে। নরেন্দ্র-লি নিজস্বী দেখে চিনের অনেক নাগরিকই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, লি খ্যছিয়াংকে ছবিতে তো ভালই দেখাচ্ছে। চিনা নেতারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না কেন?

কিন্তু চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং ও লি খ্যছিয়াংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক থেকে কী বেরিয়ে এল এ দিন? যৌথ বিবৃতি দেখে কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, ভারতের বক্তব্যকে অনেকটা গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে চিন। চিনের ক্ষেত্রে সীমান্ত সমস্যা ও বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। সেইসঙ্গে পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে (এনএসজি) ঢুকতে চিনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে ভারত।

ওষুধ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি— অনেক ক্ষেত্রেই চিন তার বাজার ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য বন্ধ করে রেখেছে বলে দাবি সাউথ ব্লকের। এমনকী, কৃষিপণ্যের মতো ক্ষেত্রেও ভারতীয় পণ্য ঢুকতে দিচ্ছে না বেজিং। ভারতে যত পণ্য রফতানি করে বেজিং, আমদানি করে ঢের কম। বাণিজ্য ঘাটতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ নিয়ে ভারতের অবস্থান খোলাখুলি ভাবেই চিনকে জানিয়েছেন মোদী। যৌথ বিবৃতিতে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে চিনা সংস্থার যোগাযোগ বাড়ানো, ওষুধ এবং কৃষিপণ্যের দ্বিমুখী বাণিজ্যবৃদ্ধি, কিছু ভারতীয় পণ্যের চিনাবাজারে ঢোকার জন্য মাসুল কমানোর মতো পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। আজ ২৪টি চুক্তি করেছে দু’দেশ। যমজ শহর ও যমজ প্রদেশের গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়েছে দু’দেশের ছ’টি শহর ও দু’টি প্রদেশ। চিনাদের জন্য ই-ভিসার কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। ভারতীয় শিবির আপাত ভাবে সন্তোষই প্রকাশ করছে এতে। কারণ, বাণিজ্যিক যোগ বাড়ানো ও ভারতীয় পণ্যের জন্য মাসুল কমানোর কথা বলে দিল্লির বক্তব্যকে বেজিং গুরুত্ব দিয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

সীমান্ত সমস্যা নিয়েও নিজের অবস্থান লঘু করেননি মোদী। কেবল চিনা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে নয়, বেজিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাবার্তার সময়েও তিনি জানিয়েছেন, এই সমস্যা ইতিহাসের উত্তরাধিতার। পরস্পরের নিরাপত্তা ও সমান অধিকারের কথা মাথায় রেখে তার সমাধান করতে হবে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বাৎসরিক সফর ও সামরিক হটলাইন চালু ও সীমান্তের কম্যান্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে রাজি হয়েছে বেজিং। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে ঢোকা নিয়ে ভারতের দাবির কথা তারা ‘লক্ষ্য’ করেছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে বেজিং। তাতে যে পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধী প্রচেষ্টা আরও জোরালো হবে সে কথাও বলেছে চিন। এটাও মোদীর সফরের অন্যতম সাফল্য বলে মনে করছে সাউথ ব্লক।


টেম্পল অব হেভেন পার্কে কচিকাচাদের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার বেজিংয়ে। ছবি: এএফপি।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে এশিয়ায় ছড়ি ঘোরানো যে সম্ভব নয় তা শি চিনফিং জানেন। চিনের আর্থিক সংস্কারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ভারতের বিপুল বাজার ধরার বাধ্যবাধকতাও আছে তাঁর। ভারত, জাপান এবং আমেরিকার যৌথ নৌ মহড়ার বিষয়টিও কিছুটা চাপে রেখেছে ভারত মহাসাগরে একাধিপত্ব তৈরি করতে ইচ্ছুক চিনা নেতৃত্বকে।

এই পরিস্থিতিতে নরম-গরম কূটনীতি চালিয়ে কিছুটা এগোনো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি। তাই নরেন্দ্র মোদী হাসতেই পারেন বলে মত ভারতীয় কূটনীতিকদের একটি অংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE