Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ডাক্তার সেজে হাসপাতালে আইএস-হানা

সকাল ন’টা। কাবুলের সবচেয়ে বড় সেনা হাসপাতালে তখন আর পাঁচটা দিনের মতোই তুমুল ব্যস্ততা। সর্দার দাউদ হাসপাতালের মূল ফটকে আচমকাই একটা বড়সড় গ্রেনেড বিস্ফোরণ।

অভিযান: কাবুলের হাসপাতালে বুধবার আইএস জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। ঘটনাস্থলে সক্রিয় সামরিক অফিসাররা। ছবি: রয়টার্স।

অভিযান: কাবুলের হাসপাতালে বুধবার আইএস জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। ঘটনাস্থলে সক্রিয় সামরিক অফিসাররা। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

সকাল ন’টা। কাবুলের সবচেয়ে বড় সেনা হাসপাতালে তখন আর পাঁচটা দিনের মতোই তুমুল ব্যস্ততা। সর্দার দাউদ হাসপাতালের মূল ফটকে আচমকাই একটা বড়সড় গ্রেনেড বিস্ফোরণ। তার পরই ডাক্তারের পোশাক পরা এক দল লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে দিল। হাসপাতাল কর্মী, ডাক্তার, রক্ষীরা তো বটেই, জঙ্গিদের নিশানা থেকে বাদ পড়েননি মুমূর্ষু রোগীরাও।

আফগানিস্তানের সরকারি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, আজ সকালে কাবুলের ওই হাসপাতালে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে তিরিশ জনের। আহত ৫০।

প্রায় ছ’ঘণ্টা গুলি যুদ্ধের পরে সর্দার দাউদ হাসপাতাল জঙ্গি মুক্ত বলে ঘোষণা করে আফগান সরকার। কিন্তু তত ক্ষণে ৪০০ শয্যার হাসপাতাল তছনছ হয়ে গিয়েছে। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেদিক সিদ্দিকি টুইট করে জানান, সব ক’টা জঙ্গিকেই মেরে ফেলেছে আফগান সেনার কম্যান্ডো বাহিনী।

আজকের হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। তালিবান আলাদা বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আইএস সমর্থিত আমাক সংবাদ সংস্থা টেলিগ্রাম মেসেজ অ্যাপের মাধ্যমে দু’টি ছবি শেয়ার করেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, তাদের এক জঙ্গি রাইফেল হাতে নিয়ে গুলি চালাচ্ছে। তার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে অজস্র লাশ। আজকের হামলার নিন্দা করেছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি। তাঁর কথায় ‘‘এই ধরনের হামলা মনুষ্যত্বকেই তছনছ করে দেয়।’’

হাসপাতালের ফটকে গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর পরই খবরটা রটে যায়। স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলি তখন গোটা অভিযানটা দেখাতে শুরু করেছে। কোনও মতে পালিয়ে আসা এক হাসপাতাল কর্মী তখন টিভিতে ‘বাইট’ দিচ্ছেন, ‘‘সাদা অ্যাপ্রন পরা কালাশনিকভ হাতে জঙ্গিরা ভিতরে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে। রোগীরাও বাদ যাচ্ছে না।’’ হাসপাতালের এক কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে জঙ্গিরা। আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন।’’ আবদুল কাদির নামে এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, তিনি ওটি-তে অস্ত্রোপচার করছিলেন, সেখানে ঢুকেও জঙ্গিরা তাঁকে গুলি করেছে। টিভি চ্যানেলে তারই মধ্যে দেখা গেল, প্রাণ ভয়ে দোতলার জানলা বেয়ে বাইরের কার্নিশে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কয়েক জন। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টার করে হাসপাতালের ছাদে নামতে শুরু করে কম্যান্ডো বাহিনী। তাদের গুলিতেই প্রাণ হারায় সব জঙ্গি। তবে সেটা করতেও ছ’ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

তালিবান দায় এড়ালেও এই গোটা অভিযানে আইএস তাদের কায়দাই অনুসরণ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। কোনও প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক প্রথমে গ্রেনেডে উড়িয়ে দিয়ে তার পর সেখানে ঢুকে হামলা চালানোটা তালিবানই মূলত করে থাকে। দেশে আইএস ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে আফগান সরকার এত দিন ধরে যে দাবি করে আসছিল, আজকের হামলা তাতেও বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য গত কয়েক মাসে পর পর বেশ কয়েকটি বড়সড় হামলা চালিয়েছে আইএস। আজকের এই হামলা তার মধ্যে অন্যতম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Isis Militants Hospital Kabul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE