গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
স্থান কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঘড়ির কাঁটা দুপুর পেরিয়ে বিকেলের দিকে। রানওয়েতে যাত্রী নিয়ে ওড়ার অপেক্ষায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বাণিজ্যিক উড়ান এয়ারবাস এ-৩২০। গন্তব্য পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। কাবুলের তখতে তখনও আসীন আশরাফ গনি।
আচমকাই পাহাড়ে ঘেরা শহরে বারুদের গন্ধ। আকাশের কোণে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ততক্ষণে বিমান ওড়ার জন্য তৈরি, অপেক্ষা কেবল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সবুজ সঙ্কেতের। আচমকাই যেন আমূল বদলে গেল পরিস্থিতি। জানা গেল, কাবুলের দখল নিয়ে ফেলেছে তালিবান। এয়ারবাস এ-৩২০ এর পাইলট জানতে পারলেন বিমানবন্দরের এটিসি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্ত বাণিজ্যিক বিমানের ওঠানামা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কিন্তু টারম্যাকে যে যাত্রী নিয়ে ওড়ার অপেক্ষায় এয়ারবাস এ-৩২০!
কী ভাবে, কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাত্রী ভর্তি বিমান নিয়ে, বিমানবন্দরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছাড়াই পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ-৩২০ উড়ল আকাশে এবং শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছল, তা যেন হলিউডি থ্রিলারকেও বলে বলে দশ গোল দেবে।
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ-৩২০ এর পাইলট মকসুদ বাজরানির মাথায় সেই সময় ঘুরছিল, যে ভাবেই হোক, বিমান আকাশে ওড়াতেই হবে। কিন্তু ছোটখাটো সেনা বিমান যে ভাবে এটিসির যোগাযোগ ছাড়াই উড়ান ভরতে পারে, বিপুল বপু বাণিজ্যিক উড়ানের কাছে তা ভাবনার অতীত।
এ দিকে বিমানবন্দরে আটকে থাকলে তালিবানের হাতে আটক হওয়ার ভয়। এত যাত্রীকে পণবন্দি করে তালিবান যে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আবার এটিসির সবুজ সঙ্কেত না নিয়ে উড়তে গেলে জরিমানা ও শাস্তির ভয়। তা হলে উপায় কী?
ঠিক সেই সময় বিমানের ক্যাপ্টেন দেখেন বহু মানুষ বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছেন। রানওয়ে ধরে সবাই এগিয়ে আসছেন বিমানের দিকে। শেষবার এটিসিতে যোগাযোগ করেন মকসুদ বাজরানি।
মদত মিলবে না বুঝতে পেরে ককপিটে বসেই মকসুদ বাজরানি একতরফা সিদ্ধান্ত নেন, শাস্তি হলে হবে কিন্তু কোনও অবস্থাতেই এত যাত্রীর জীবন বিপন্ন করা যাবে না। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বিমানের ভিতরে যাত্রীদের জন্য ক্যাপ্টেনের ঘোষণা, সবাই সিট বেল্ট বেঁধে আসনে বসুন। আমরা উড়তে প্রস্তুত।
রবিবার সন্ধে ৭টা ১০ নাগাদ ইসলামাবাদ পৌঁছে বিমানের ক্যাপ্টেন মকসুদ বাজরানি বলেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এত যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে হবে, এটুকুই কেবল মাথায় ঘুরছিল। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিই, দু’টি সেনা বিমানের লেজ ধরেই আকাশে উড়বে এয়ারবাস এ-৩২০। তারপর প্রবল গতিতে বিমান এগিয়ে চলে কাবুল বিমানবন্দরের রানওয়ে ধরে, অতঃপর টেক অফ!
এ দিকে অত যাত্রী নিয়ে নিরাপদে ইসলামাবাদের মাটি ছোঁয়ার পর ক্যাপ্টেন মকসুদ বাজরানিকে ঘিরে শুভেচ্ছার বন্যা। খোদ পিআইএ সিইও আর্শাদ মালিক দেখা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মকসুদকে। আর মকসুদ বলছেন, কাবুল বিমানবন্দরের এটিসি থেকে পাঠানো শেষ বার্তা ছিল, ‘নিজে সিদ্ধান্ত নিন!’ হাজার বিপদ সত্ত্বেও আমার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তাতেই আমি খুশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy