বোকো হারাম জঙ্গিদের কবল থেকে তখন সবে মাত্র শহরটিকে মুক্ত করেছে নাইজেরিয় সেনা। শুরু হয়েছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। কিন্তু একটা তীব্র পচা গন্ধে প্রাণ জেরবার। কোথা থেকে আসছে এমন গন্ধ? উত্স খুঁজতে গিয়ে দামাসাক শহরের একটি সেতুর তলা থেকে একশো মানুষের গণকবরের সন্ধান পেল সেনাবাহিনী। আশপাশে চাপ চাপ শুকনো রক্তের দাগ। সব কিছু দেখে তাণ্ডবের ছবিটা ঠাহর করতে অসুবিধা হয় না। সেনাবাহিনীর দাবি, ওই এলাকাতেই কারও গলা কেটে, কারও আবার মাথা কেটে ব্রিজের তলায় কবর দিয়েছিল বোকো হারাম জঙ্গিরা।
নাইজেরিয়ার মাটিতে কট্টরপন্থী ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের তাণ্ডব নতুন কিছু নয়। কিছু বছর ধরে নাইজেরিয়া-সহ আশপাশের কয়েকটি দেশে আধিপত্য কায়েম করে ইসলামিক ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বোকো হারাম। তাদের নৃশংস অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সমান তালে চলেছে ধর্ষণের মতো অপরাধও। এক সময় নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে ছাত্রী-শিক্ষিকা মিলিয়ে দু’শোর বেশি বাসিন্দাকে অপহরণ করে খবরের শিরোনামে উঠে আসে ওই জঙ্গিগোষ্ঠী। সেই সব তথ্য মাথায় রাখলে তাদের কাছ থেকে কোনও ধরনের নৃশংসতাই অপ্রত্যাশিত নয়। তবু উদ্ধার হওয়া দেহগুলিকে দেখে কেমন যেন শিউরে উঠছেন সেনাবাহিনীর কেউ কেউ।
নিথর দেহগুলো প্রায় ‘মমি’তে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকায় ধুলো, মাটি, বালির পুরু আস্তরণ পড়েছে সেগুলিতে। কারও কারও চামড়া, মাংসের আড়াল সরে গিয়ে চোখ-মুখের হাড় বেরিয়ে এসেছে। সে সব দেখে সেনাবাহিনীর কেউ কেউ আন্দাজ করছেন, ওই গণহত্যা নিশ্চয়ই বেশ কিছু দিনের পুরনো ঘটনা। অনেকের মাথা কাটা হয়েছিল। অন্তত ৭০ জনের গলার নলি ছিন্নভিন্ন। সেতুর এক দিকে শুকনো কালো রক্তের চাপ চাপ দাগ। সেনার ধারণা, সে দিকে গণহত্যা করে মেরে অন্য দিকে দেহগুলিকে ছুড়ে ফেলেছিল জঙ্গিরা। তার পর সেগুলির উপর মাটি চাপা দেয় তারা। নিহতদের মধ্যে দামাসাকের ইমামও রয়েছেন, দাবি সেনাবাহিনীর।
তবে এতেই বোধহয় বীভত্সতার শেষ নয়। কারণ এখনও শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে একই ধরনের পচা গন্ধ নাকে আসছে সেনাবাহিনীর। যার উপর ভিত্তি করে সেনার ধারণা, এ ধরনের গণকবর আরও রয়েছে দামাসাকে।
থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। তথ্য বলছে, এ মুহূর্তে দামাসাকের বাসিন্দার সংখ্যা ৫০। সেনাবাহিনীর ধারণা, বাকি বাসিন্দাদের কেউ কেউ জঙ্গি-তাণ্ডবে শহর ছেড়েছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগেরই খোঁজ নেই।
হয়তো এমনই কোনও তীব্র পচা গন্ধ সেই নিখোঁজ বাসিন্দাদেরও ঠিকানা বলে দেবে, আশঙ্কায় ভুগছে নাইজেরিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy