Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Maharajah Well

Maharajah Well: কুয়ো বানিয়ে বিলেতের গ্রামের খরা দূর করেন বারাণসীর এই মহারাজা

জানেন কি ভারতের এক রাজা বারাণসীতে বসে ইংল্যান্ডের দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১০:২০
Share: Save:
০১ ১৩
বাণিজ্য করতে এসে বহু বছর ভারত শাসন করে গিয়েছেন ব্রিটিশরা। প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারতে অনেক পরিকাঠামোও গড়ে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জানেন কি ভারতের এক রাজা বারাণসীতে বসে ইংল্যান্ডের দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন? জলসঙ্কট দূর করা থেকে আর্থিক উন্নয়ন— এ সবের জন্য ইংল্যান্ডের এক গ্রাম আজও ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।

বাণিজ্য করতে এসে বহু বছর ভারত শাসন করে গিয়েছেন ব্রিটিশরা। প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারতে অনেক পরিকাঠামোও গড়ে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জানেন কি ভারতের এক রাজা বারাণসীতে বসে ইংল্যান্ডের দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন? জলসঙ্কট দূর করা থেকে আর্থিক উন্নয়ন— এ সবের জন্য ইংল্যান্ডের এক গ্রাম আজও ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।

০২ ১৩
১৮ দশকের মাঝামাঝি। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড ভয়ানক খরায় জর্জরিত। তৃষ্ণা সহ্য করতে না পেরে সুদূর ইংল্যান্ডে এক গৃহস্থের সঞ্চয়ের শেষ জল পান করে ফেলেছিল এক খুদে। সেই ‘অপরাধ’-এর জন্য শাস্তিও পেয়েছিল সে। তীব্র ভর্ৎসনা এবং মায়ের হাতে বেধড়ক মার জুটেছিল তার।

১৮ দশকের মাঝামাঝি। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড ভয়ানক খরায় জর্জরিত। তৃষ্ণা সহ্য করতে না পেরে সুদূর ইংল্যান্ডে এক গৃহস্থের সঞ্চয়ের শেষ জল পান করে ফেলেছিল এক খুদে। সেই ‘অপরাধ’-এর জন্য শাস্তিও পেয়েছিল সে। তীব্র ভর্ৎসনা এবং মায়ের হাতে বেধড়ক মার জুটেছিল তার।

০৩ ১৩
হাজার হাজার মাইল দূরে বারাণসীর মহারাজার সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিয়ে সেই অভাবের ঘটনা তুলে ধরেছিলেন এডওয়ার্ড অ্যান্ডারডন রিয়েডে। ইউনাইটেড প্রভিন্স-এর গভর্নর জেনারেল ছিলেন তিনি।

হাজার হাজার মাইল দূরে বারাণসীর মহারাজার সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিয়ে সেই অভাবের ঘটনা তুলে ধরেছিলেন এডওয়ার্ড অ্যান্ডারডন রিয়েডে। ইউনাইটেড প্রভিন্স-এর গভর্নর জেনারেল ছিলেন তিনি।

০৪ ১৩
এডওয়ার্ডের মুখ থেকে খরা কবলিত ইংল্যান্ডের সেই গ্রামের কথা শুনে স্থির থাকতে পারেননি মহারাজা। ভারতে বসেই ইংল্যান্ডের মাটিতে কুয়ো বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।

এডওয়ার্ডের মুখ থেকে খরা কবলিত ইংল্যান্ডের সেই গ্রামের কথা শুনে স্থির থাকতে পারেননি মহারাজা। ভারতে বসেই ইংল্যান্ডের মাটিতে কুয়ো বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।

০৫ ১৩
ইংল্যান্ডের স্টোক রো গ্রামে কুয়ো বানিয়ে দেন তিনি। সেই কুয়োর জল খেয়ে দীর্ঘ বছর খরা থেকে নিস্তার পেয়েছিলেন সেই গ্রামের মানুষ। এখন আর জলের অভাব নেই গ্রামে। পানীয় জলের পাইপলাইন চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্রামে খরার ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই কুয়ো। যাকে সারা বিশ্ব মহারাজা কুয়ো নামেই জানে।

ইংল্যান্ডের স্টোক রো গ্রামে কুয়ো বানিয়ে দেন তিনি। সেই কুয়োর জল খেয়ে দীর্ঘ বছর খরা থেকে নিস্তার পেয়েছিলেন সেই গ্রামের মানুষ। এখন আর জলের অভাব নেই গ্রামে। পানীয় জলের পাইপলাইন চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্রামে খরার ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই কুয়ো। যাকে সারা বিশ্ব মহারাজা কুয়ো নামেই জানে।

০৬ ১৩
মহারাজা কোনও দিন ইংল্যান্ডে যাননি। কোনও দিন কুয়ো দেখতেও যাননি। কিন্তু ভারতে বসেই দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের। মহারাজার উদারতা সে সময় আরও অনেক ভারতীয় বিত্তশালীকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ইংল্যান্ডের ওই গ্রামে উন্নয়ন ঘটাতে।

মহারাজা কোনও দিন ইংল্যান্ডে যাননি। কোনও দিন কুয়ো দেখতেও যাননি। কিন্তু ভারতে বসেই দুঃখ ঘুচিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের। মহারাজার উদারতা সে সময় আরও অনেক ভারতীয় বিত্তশালীকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ইংল্যান্ডের ওই গ্রামে উন্নয়ন ঘটাতে।

০৭ ১৩
কুয়োটির গভীরতা ছিল ৩৬৮ ফুট। মাত্র দু’জন কর্মী এই কুয়ো খুঁড়েছিলেন। ১৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করার পর ধস নেমে প্রাণনাশের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছিল এক সময়। কনকনে ঠান্ডায় অন্ধকার কুয়োর ভিতর খনন চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ ভাবে এক বছরের চেষ্টায় কুয়োর কাজ সম্পূর্ণ হয়।

কুয়োটির গভীরতা ছিল ৩৬৮ ফুট। মাত্র দু’জন কর্মী এই কুয়ো খুঁড়েছিলেন। ১৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করার পর ধস নেমে প্রাণনাশের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছিল এক সময়। কনকনে ঠান্ডায় অন্ধকার কুয়োর ভিতর খনন চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ ভাবে এক বছরের চেষ্টায় কুয়োর কাজ সম্পূর্ণ হয়।

০৮ ১৩
১৮৬৪ সালের ২৪ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে কুয়ো খনন শুরু হয়। যা বানাতে সে সময় যত খরচ হয়েছিল, তা বর্তমানে ৩৫৩ ইউরোর সমান। আজকের হিসাবে সেই সময় ভারতীয় মুদ্রায় খরচ হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৪৫ টাকা। কুয়োর দেখভালের জন্য নিরাপত্তা রক্ষীর থাকার জন্য কটেজও বানিয়ে দিয়েছিলেন মহারাজা। এর জন্য সে সময় যে খরচ হয়েছিল, তা বর্তমানে ৭৪ ইউরোর সমান। অর্থাৎ আজকের হিসাবে সেই সময় খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এ ছাড়া কুয়োর পাশে সোনালি রঙের একটি হাতির মূর্তি এবং কুয়োর উপরের অংশে একটি গম্বুজ বানিয়েছিলেন।

১৮৬৪ সালের ২৪ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে কুয়ো খনন শুরু হয়। যা বানাতে সে সময় যত খরচ হয়েছিল, তা বর্তমানে ৩৫৩ ইউরোর সমান। আজকের হিসাবে সেই সময় ভারতীয় মুদ্রায় খরচ হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৪৫ টাকা। কুয়োর দেখভালের জন্য নিরাপত্তা রক্ষীর থাকার জন্য কটেজও বানিয়ে দিয়েছিলেন মহারাজা। এর জন্য সে সময় যে খরচ হয়েছিল, তা বর্তমানে ৭৪ ইউরোর সমান। অর্থাৎ আজকের হিসাবে সেই সময় খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এ ছাড়া কুয়োর পাশে সোনালি রঙের একটি হাতির মূর্তি এবং কুয়োর উপরের অংশে একটি গম্বুজ বানিয়েছিলেন।

০৯ ১৩
৭০ বছর ধরে গ্রামের জলসঙ্কট দূর করেছিল এই কুয়ো। মহারাজা যত দিন বেঁচেছিলেন, কুয়োর রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় ব্যয় বহন করে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অভাব-অনটন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। মহারাজার উদারতা গ্রামবাসীদের মুগ্ধ করেছিল।

৭০ বছর ধরে গ্রামের জলসঙ্কট দূর করেছিল এই কুয়ো। মহারাজা যত দিন বেঁচেছিলেন, কুয়োর রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় ব্যয় বহন করে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অভাব-অনটন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। মহারাজার উদারতা গ্রামবাসীদের মুগ্ধ করেছিল।

১০ ১৩
১৮৭১ সালে গ্রামে নিজের খরচে একটি ফুটপাথ বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৮৮২ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার উপর হামলা হয়েছিল। রানি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই খুশিতে ওই গ্রামের সকলের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মহারাজা।

১৮৭১ সালে গ্রামে নিজের খরচে একটি ফুটপাথ বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৮৮২ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার উপর হামলা হয়েছিল। রানি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই খুশিতে ওই গ্রামের সকলের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মহারাজা।

১১ ১৩
১৮৮৬ সালে এডওয়ার্ড-এর মৃত্যু হয়। তার পর আর সে ভাবে কুয়োর দেখভাল হত না। ১৯২৭ সালে গ্রামে পানীয় জলের পাইপলাইন প্রবেশের পর কুয়োর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ সালে ভারতে এসেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া, তাঁর কাছে কুয়োর শতবর্ষ উদ্‌যাপনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বেনারসের তৎকালীন মহারাজা। কথা রেখেছিলেন রানি।

১৮৮৬ সালে এডওয়ার্ড-এর মৃত্যু হয়। তার পর আর সে ভাবে কুয়োর দেখভাল হত না। ১৯২৭ সালে গ্রামে পানীয় জলের পাইপলাইন প্রবেশের পর কুয়োর ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ সালে ভারতে এসেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া, তাঁর কাছে কুয়োর শতবর্ষ উদ্‌যাপনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বেনারসের তৎকালীন মহারাজা। কথা রেখেছিলেন রানি।

১২ ১৩
ধুমধাম করে শতবর্ষ পালিত হয়েছিল। অন্তত দেড় হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন তাতে। যোগ দিয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপও।

ধুমধাম করে শতবর্ষ পালিত হয়েছিল। অন্তত দেড় হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন তাতে। যোগ দিয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপও।

১৩ ১৩
স্টোক রো-এ কোনও প্রাকৃতিক পানীয় জলের উৎস ছিল না। পরবর্তীকালে এই কুয়ো ঘিরেই বসতি স্থাপন হতে শুরু করেছিল। কুয়ো ঘিরে একটি ইট তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল ওই গ্রামে। গ্রামের জলসঙ্কট দূর করার পাশাপাশি, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিল মহারাজার কুয়ো।

স্টোক রো-এ কোনও প্রাকৃতিক পানীয় জলের উৎস ছিল না। পরবর্তীকালে এই কুয়ো ঘিরেই বসতি স্থাপন হতে শুরু করেছিল। কুয়ো ঘিরে একটি ইট তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল ওই গ্রামে। গ্রামের জলসঙ্কট দূর করার পাশাপাশি, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিল মহারাজার কুয়ো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE