নেপালে ভূমিকম্পের দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।
এই প্রবল ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচেই গত কাল রাতটা কাটিয়েছেন চিউরি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। এই নিয়ে টানা দু’দিন। নিজেদের গায়ে তোলার শীতের পোশাকটুকুও এখন নেই তাঁদের। গত শুক্রবার রাতে নেপালের পশ্চিমাংশে প্রত্যন্ত জাজরকোট জেলায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই চিউরি গ্রামই।
ভূমিকম্পের পরে কেটে গিয়েছে দু’টো রাত। কিন্তু এখনও পাহাড় ঘেরা জাজরকোটের প্রত্যন্ত গ্রামের অনেকাংশে পৌঁছতেই পারেনি নেপালের সেনা আর পুলিশের যৌথ বাহিনী। কম্পনের তীব্রতায় অধিকাংশ পাহাড়ে ধস নেমেছে। হেঁটে সে সব জায়গায় পৌঁছতে তাই প্রবল অসুবিধের মধ্যে পড়তে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। গত কাল রাতেই প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ জানানো হয়েছে, আহতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নতুন করে কারও মৃত্যুর খবর আসেনি। তবে ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সে ক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নেপাল পুলিশের মুখপাত্র কুবের কাদায়াত আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আপাতত আহতদের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা চলছে এখনও কেউ বেঁচে রয়েছেন কি না, তার সন্ধান চালানো। পাশাপাশি, প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ সামগ্রী এবং ওষুধ পৌঁছনোর কাজও চালানো হচ্ছে পুরোদমে। এখনও পর্যন্ত যে সব গ্রামে সরকারি ত্রাণ পৌঁছয়নি, গ্রামবাসীরাই প্লাস্টিক এবং ছেঁড়া জামা কাপড় দিয়ে অস্থায়ী থাকার জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন। সরকারের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, আপাতত প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাঁবু, ওষুধ, কম্বল আর শুকনো খাবার পৌঁছনোই এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য।
চিউরি গ্রাম জুড়ে এখন শুধুই হাহাকার আর কান্না। নদীর ধারের শ্মশানে প্রিয়জনদের দেহ সৎকারের দীর্ঘ অপেক্ষায় গ্রামবাসীরা। শ্মশানে চিতা মাত্র একটিই। ফলে দেহ সৎকারেও লাগছে দীর্ঘ সময়। নিজের সাত বছরের ছেলের দেহের সামনে পাথর হয়ে বসেছিলেন বলজিৎ মাহার। জানালেন ভূমিকম্প শুরু হয়েছে বুঝে বাড়ির সকলেই যখন বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন, ভিতরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়ে তাঁর শিশুপুত্র। বললেন, ‘‘বাড়ির বাকি ছ’জন সুরক্ষিত বেরোতে পারলেও ওকে বাঁচাতে পারলাম ন।’’ শুক্রবার রাতে যে সময়ে ভূমিকম্প হয়, চিউরি গ্রামের সকলেই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কেউ নিজের পরিবারের সাত সদস্যকে একসঙ্গে হারিয়েছেন। কেই মারাত্মক জখম হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। হাসপাতালে শুয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিমলকুমার কারকি বলেলন, ‘‘কম্পন যখন শুরু হয়, আমি ঘুমোচ্ছিলাম। প্রবল কাঁপুনিতে যখন ঘুম ভাঙে, ঘর থেকে দৌড়ে বেরোতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শরীরের অর্ধেক ঢুকে যায়। পরে উদ্ধারকারীরা এসে আমাকে টেনে তোলেন।’’ চিউরির আর এক বাসিন্দা জানালেন, তাঁর বাড়িতে একটি জিনিসও অবশিষ্ট নেই। এই শীতে গায়ে জড়ানোর মতো কম্বল বা পোশাকও তাঁর নেই।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ‘প্রচণ্ড’ আজই সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে পরপর দু’টি বৈঠক সেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারপিছু আপাতত দু’লক্ষ নেপালি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার। আহতদের সব ধরনের চিকিৎসার ভার সরকার নেবে বলে আগেই জানানো হয়েছে। একটি সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতের পর থেকে দেড়শোরও বেশি বার আফটার শক অনুভূত হয়েছে নেপাল জুড়ে। আজ ভোর রাতেও এক বার হালকা কম্পন টের পাওয়া যায়। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৩.৬।
নেপালে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য আজ একটি আপৎকালীন নম্বর দিয়েছে ভারত সরকার। এ দেশে বসবাসকারী ভারতীয়েরা যে কোনও প্রয়োজনে ওই নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy