Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শীতকাল কবে যাবে, সুপর্ণা

শুধু উত্তর-মধ্য আমেরিকা নয়, ঠান্ডা আর বরফ এ দেশের দক্ষিণেও আছে। আমাদের হয় তো ‘মাইনাস দশ’, উত্তরে ‘মাইনাস পঁচিশ’। আমাদের হয় তো তিন ফুট বরফ, ওদের আট ফুট।

তাণ্ডব: বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তুষার ঝড়ের কবলে। বুধবার নিউ ইয়র্ক প্রদেশের বাফেলোয়। রয়টার্স

তাণ্ডব: বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তুষার ঝড়ের কবলে। বুধবার নিউ ইয়র্ক প্রদেশের বাফেলোয়। রয়টার্স

শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়
ন্যাশভিল (টেনেসি) শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

শুধু উত্তর-মধ্য আমেরিকা নয়, ঠান্ডা আর বরফ এ দেশের দক্ষিণেও আছে। আমাদের হয় তো ‘মাইনাস দশ’, উত্তরে ‘মাইনাস পঁচিশ’। আমাদের হয় তো তিন ফুট বরফ, ওদের আট ফুট। কিন্তু ঠান্ডা তো ঠান্ডাই, বরফ তো বরফই। বরং উত্তরের সুবিধা হল, আট ফুট বরফ হলে অফিস-বাজার-স্কুল বন্ধ। ঘরে বসে বাইরের ছবি তোলো। আর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করো। অথচ দক্ষিণে বরফ তিন ফুট, তাই এখানে সব কিছুই খোলা।

আর ঠান্ডা বলে ঠান্ডা! দিল্লি যতই দূর হোক, সেই ‘মাফলার মানব’-কে মনে পড়বেই। তাঁকে যদি এই দুঃখী দক্ষিণে এনে বলা যায়, ‘মাফলার নেবেন, না মুখ্যমন্ত্রিত্ব?’ উনি নির্ঘাত মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে নিজেকে মাফলারে মুড়োবেন। সারা রাত গ্যারাজে থাকা গাড়ি, সকালে তাতে যেই ঢুকেছি, ওরে বাবা রে, এ মেরু উত্তর না দক্ষিণ কে জানে! গাড়ির ভিতর গরম করার মেশিন তো চলছেই, কিন্তু শুধু তাতে কাজ হবে না। যত গরমের বোতাম, সব টিপে দিতে হবে এক সঙ্গে। সিট গরম চাই, স্টিয়ারিং গরম চাই। এর পর শুরু হবে রবি শাস্ত্রীর মতো মন্থরতম ব্যাটিং (পড়ুন ড্রাইভিং)। ঘণ্টায় ১২০ কিমি বেগে চালিয়ে অভ্যাস, কিন্তু এখন চালাতে হবে মাত্র ৪০-এ! এ ভাবে কোনও ক্রমে পার্কিং লটে পৌঁছলে শুরু হবে ‘ডান্ডি অভিযান’! নুনের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানো! বরফ জমা আটকাতে সাত সকালে লবণ আন্দোলন ঘটানো হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়।

তবে সব সময় নুন ছড়িয়েও নিস্তার মেলে না। দক্ষিণের কিছু ভূখণ্ড আবার উপত্যকা গোছের। পথে পথে পাহাড় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই চড়াই তো সেই উতরাই! এক ফুট বরফ জমলেই চিত্তির! এই তো সে দিন কুরুক্ষেত্রে কর্ণের রথের চাকার মতো বরফে আটকে গেল গাড়ি। নিজের পাড়ায় ঢুকেও গাড়ি নিয়ে বাড়ি ঢুকতে পারলাম না। ওই হু হু ঠান্ডায় ‘অযান্ত্রিক’এর চালকের মতো রিক্ত পায়ে বাড়ি ঢুকলাম। রাস্তায় রাতভর বরফ মাথায় পড়ে রইল গাড়ি।

আমেরিকায় আবার মানুষের মতো বরফও দুই রকম, শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গ! সাদা বরফে তবু রক্ষে, গাড়ি যাবে থেমে। কিন্তু কালো বরফ বা ব্ল্যাক আইসে (রাস্তার উপর পড়ে থাকা স্বচ্ছ বরফের আস্তরণ) গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে গিয়ে ধাক্কা মারবে যেখানে সেখানে। পুরু বরফে এই সমস্যা কম হয়, কিন্তু কম, স্বচ্ছ বরফ পড়ে থাকলে মনে হয় পিচ ঢালা কালো রাস্তা। অনেক অভিজ্ঞ চালককে বোকা বানিয়ে দিতে পারে এই কালো বরফ!

তাই বরফ বরফই, বরং তা কম হলে ভোগান্তি বেশি। তেমনি ঠান্ডাও ঠান্ডাই। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নামলেই, কি উত্তরে কি দক্ষিণে, বাথরুম আর রান্নাঘরের সব কল আস্তে করে খুলে দিতে হবে যাতে সর্বদা বিন্দু বিন্দু জল পড়ে। বাড়ির বাইরের সব কলের মুখে ঢাকনা পরিয়ে দিতে হবে। নইলে যখন তখন জলের পাইপ জমে ফেটে যাবে, আর বাড়ি বন্যায় ভাসবে!

মার্কিন মুলুকের শিরদাঁড়ায় এখন ঠান্ডা স্রোত ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ বসে আছে তামাম আমেরিকা। শীতকাল কবে যাবে, সুপর্ণা!

লেখক টেনেসি সরকারের স্বাস্থ্য প্রশাসনে কর্মরত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Snow USA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE