Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
International News

পাকিস্তানের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিতে বিল মার্কিন কংগ্রেসে, উদ্বেগে শরিফরা

টেড পো বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের হাতে মার্কিন রক্ত লেগে রয়েছে।’’ এর ফল পাকিস্তানের পাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। টেড পো মার্কিন কংগ্রেসের কোনও সাধারণ সদস্য নন।

ওবামার আমল থেকেই পাক-মার্কিন সম্পর্কে অবনতির শুরু। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরও দ্রুত পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দুই দেশ। —প্রতীকী ছবি।

ওবামার আমল থেকেই পাক-মার্কিন সম্পর্কে অবনতির শুরু। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরও দ্রুত পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দুই দেশ। —প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ১৭:১৮
Share: Save:

‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালায়ি’ বা এমএনএনএ— পাকিস্তানকে এই মর্যাদাই দিয়েছিল আমেরিকা। ন্যাটো বহির্ভূত যে সব দেশের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রয়েছে, সেই সব দেশকেই ওয়াশিংটন এই মর্যাদা দেয়। সেই মর্যাদা এ বার হারাতে পারে পাকিস্তান। অর্থসঙ্কটে ধুঁকতে থাকা পাক সরকারের সঙ্কট আরও গভীর হতে পারে। মার্কিন কংগ্রেসে পেশ হওয়া একটি দ্বি-দলীয় বিল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। শাসক রিপাবলিকান এবং বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দুই কংগ্রেসম্যান যৌথ ভাবে বিল পেশ করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে। অবিলম্বে পাকিস্তানের এমএনএনএ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে বিলে।

রিপাবলিকান টেড পো এবং ডেমোক্র্যাট রিক নোলান মার্কিন কংগ্রেসে বিলটি পেশ করেছেন। জর্জ বুশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০০৪ সালে পাকিস্তানকে ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালায়ি’-র মর্যাদা দিয়েছিলেন। আল কায়েদা এবং তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের সাহায্য পাওয়া যাবে আশা করেই বুশ পাকিস্তানকে সেই মর্যাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান শুধু সুবিধাই নিয়েছে, সন্ত্রাস দমনে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করেনি, মনে করছেন মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্যই। টেড পো এবং রিক নোলান সেই কারণেই পাকিস্তানকে দেওয়া এমএনএনএ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেছেন।

টেড পো বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের হাতে মার্কিন রক্ত লেগে রয়েছে।’’ এর ফল পাকিস্তানের পাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। টেড পো মার্কিন কংগ্রেসের কোনও সাধারণ সদস্য নন। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের বিদেশ নীতি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য এবং সন্ত্রাসবাদ, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সাব-কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর মতো প্রভাবশালী রাজনীতিককে দিয়ে যে হেতু বিলটি পেশ করানো হয়েছে এবং সে বিলে যখন ডেমোক্র্যাটদের একাংশেরও সমর্থন রয়েছে, সে হেতু বিষয়টিকে মোটেই লঘু করে দেখছে না আন্তর্জাতিক মহল। ইসলামাবাদকে দেওয়া বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পথেই ওয়াশিংটন এগোচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা মনে করছেন। বিলটি পাশ হয়ে গেলে ইসালামাবাদের অর্থসঙ্কট তো বাড়বেই, পাক বাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছনোর পথও খুব কঠিন হয়ে উঠবে।

মার্কিন কংগ্রেসে যে বিল পেশ হয়েছে, তা ইসলামাবাদকে যে প্রবল উদ্বেগের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে, সে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের মধ্যে সংশয় কমই।

যে সব দেশকে আমেরিকা এমএনএনএ মর্যাদা দেয়, সে দেশগুলি কী কী সুবিধা পায়?

সেই সব দেশকে আমেরিকা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে। অনেক সহজ শর্তে সেই সব দেশকে আমেরিকা অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করে। অস্ত্র কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থাও আমেরিকাই করে দেয়।

২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমেরিকার কাছ থেকে দেদার এই সব সুবিধা নিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে আমেরিকা যা আশা করেছিল, তার কিছুই আমেরিকা পায়নি বলে টেড পো এবং রিক নোলানের দাবি। টেড পো-র দাবি, পাকিস্তান পিছন থেকে ছুরি মেরেছে আমেরিকাকে। এক দিকে তারা আমেরিকার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, অন্য দিকে ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে, তালিবানকে সাহায্য করেছে। মন্তব্য টেড পো-র।

আরও পড়ুন: নজর প্রিডেটর ড্রোনে, মোদীর মার্কিন সফরে কথা চূড়ান্ত করতে মরিয়া দিল্লি

রিক নোলান বলেছেন, ‘‘গত প্রায় ১৫ বছর ধরে যে লক্ষ লক্ষ ডলার আমরা পাকিস্তানে পাঠিয়েছি, তা কোনও ভাবেই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার কাজে বা আমেরিকাকে সুরক্ষিত করার কাজে লাগেনি।’’ নোলানের আরও দাবি, যে সব সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে তারা লড়াই করছে বলে পাকিস্তান দাবি করছে, সেই সব সংগঠনের সঙ্গে আসলে পাকিস্তানের যোগসাজশ রয়েছে।

পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলে, মার্কিন করদাতাদের অর্থের অপচয়টা অন্তত বন্ধ হবে। এমনই বলছেন বিলের সমর্থকেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE