তুষার-রাজ্য। গ্রিনল্যান্ড নয় কিন্তু, নিউ ইয়র্কে রবিবারের সকাল। গাড়িগুলো যেন বরফের তাঁবু। ২০০৬ সালে ২৬.৯ ইঞ্চি বরফ পড়েছিল। এক চুলের জন্য বেঁচেছে সেই রেকর্ড। গত দু’দিনে ২৬.৮ ইঞ্চি বরফ নিয়ে ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছিল শহর। গাড়িঘোড়া-মেট্রো বন্ধ ছিল। রবিবার থেকে মেট্রো অবশ্য চলছে আবার। বাসিন্দারা ব্যস্ত বরফ সরাতে, নইলে সোমবার থেকে কাজে যাবেন কী করে! এএফপি-র তোলা ছবি।
শেষ কবে এত বরফ দেখা গিয়েছিল, মনে করতে পারছে না নিউ ইয়র্ক। গোটা শহরটা যেন মুড়ে রয়েছে বরফের পুরু চাদরে। গত দু’দিনে ২৬.৮ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই। আর তার জেরে কার্যত স্তব্ধ বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই শহর। গোটা শহরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে কাল থেকে যান চলাচলের উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে এক রকম বাধ্য হয়েছিলেন শহরের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও। ঘোষণা করেছিলেন, জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য কোনও গা়ড়ি বেরোলে তার চালককে গ্রেফতার করতে বাধ্য হবে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। একই সঙ্গে বন্ধ ছিল মেট্রো পরিষেবা। আজ সকাল সাতটার পরে সেই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শহরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই তাতে। সকাল হতে না হতেই তাঁদের বরফ সরানোর কাজে হাত লাগাতে হয়েছে। ২০০৬ সালে রেকর্ড ২৬.৯ ইঞ্চি বরফ পড়েছিল নিউ ইয়র্কে। এক চুলের জন্য সেই রেকর্ডটা এ বার ভাঙেনি।
তবে শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, প্রবল তুষারঝড়ে কাহিল উত্তর ও পূর্ব আমেরিকার একটা বড় অংশ। গত দু’দিনের তুষারপাতের জেরে এই সপ্তাহান্তটা পুরোপুরি গৃহবন্দি ওয়াশিংটন, আরকানস, কেন্টাকি, ওহিও, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়ার মতো এলাকার বাসিন্দারা। অতিরিক্ত ঠান্ডা, দুর্ঘটনা আর বরফ সরাতে গিয়ে গোটা দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষ। দু’লক্ষ বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ।
সারারাত তুষারঝড়। বরফে ঢেকে গিয়েছে রাস্তাঘাট । সকাল সকাল নিজের বাড়ির সামনে জমা বরফ সরাতে ব্যস্ত এক বাসিন্দা।
রবিবার নিউ ইয়র্কে । —রয়টার্স
গত কাল সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার উড়ান বাতিল হয়েছে। দু’হাজারেরও বেশি উড়ান বাতিল করা হয়েছে আজ। আগামী কালও প্রায় ছ’শোরও বেশি বিমান ছাড়বে না বলে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আপাতত আটকে কয়েক লক্ষ যাত্রী। আগামী দু’দিনের আগে পরিস্থিতি পরিবর্তনের খুব একটা আশা নেই বলেই জানিয়ে রেখেছে বিমান সংস্থাগুলি। একই অবস্থা রেল পরিষেবারও। অতিরিক্ত তুষারপাতের জেরে বন্ধ রেললাইন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তার মধ্যেই বরফ সরিয়ে রেল পরিষেবা চালু রাখার চেষ্টা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এক দিকে আমেরিকার একটা বিস্তীর্ণ অংশ যখন প্রবল তুষারপাতে বিপর্যস্ত, উল্টো দিকে নিউ জার্সির মতো উপকূলবর্তী এলাকার প্রচুর মানুষ এখন বন্যার কবলে। স্থানীয় বাসিন্দা জেসন পেলেগ্রিনি বললেন, ‘‘সকালে উঠেই দেখলাম জলস্তর বাড়ছে। মিনিট পনেরোর মধ্যেই হুড়হুড়িয়ে জল বাড়তে থাকল।’’ হারিকেন স্যান্ডিতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল জেসনের রেস্তোরাঁ। ফলে এ বার আগেভাগেই সতর্ক ছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘জল বা়ড়ছে দেখেই ছুটেছিলাম গাড়িটা উঁচুতে রাখার জন্য। ফিরে এসে দেখি বাড়ির সামনে কোমর সমান জল।’’ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পূর্ণিমার জেরে জোয়ারের জল ঢুকে নিউ জার্সিকে ভাসিয়ে দিয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন থাকবে। তবে কাল থেকে পরিস্থিতি শোধরাতে পারে।
নিউ ইয়র্ক আর ওয়াশিংটনের জন্যও আশার বাণী শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। কাল থেকে শুরু হচ্ছে কাজের দিন। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, আজ দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। কিন্তু বরফের চাঁই সরিয়ে কাল সকালে ঠিক সময়ে কী ভাবে অফিসে পৌঁছবেন, সেটাই এখন ভাবছেন অধিকাংশ বাসিন্দা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy