সমুদ্রের নীচে চাপা পড়ে আছে নৌকা ভর্তি রাশি রাশি সোনার গয়না
আটলান্টিসের জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চয়ই জানেন। প্রাচীন যুগের বহু শহরেরই অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিল ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। আটলান্টিস নিয়ে যখন চাঞ্চল্য বা কৌতূহল কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছিল, তখনই আবার খোঁজ মিলল ভূমধ্যসাগরের তলায় চাপা পড়ে থাকা নতুন শহরের।
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০৮:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
আটলান্টিসের জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চয়ই জানেন। প্রাচীন যুগের বহু শহরেরই অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিল ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। আটলান্টিস নিয়ে যখন চাঞ্চল্য বা কৌতূহল কার্যত চাপা পড়ে গিয়েছিল, তখনই আবার খোঁজ মিলল ভূমধ্যসাগরের তলায় চাপা পড়ে থাকা নতুন শহরের।
০২১৪
সমুদ্রের ১৫০ ফুট গভীরে দেখা মিলল দু’হাজার বছরের পুরনো শহরের মন্দির, বিভিন্ন মূর্তির। পাওয়া গেল ৬৪টি প্রাচীন নৌকা যা বাসনপত্র, সোনার মুদ্রা ও গয়নাগাটিতে পরিপূর্ণ। ২০০০ সালে প্রথম এই শহরের খোঁজ পান একদল মেরিন আর্কিওলজিস্ট। এর পর উদ্ধারকার্য শুরু হয়, যা আজও চলছে।
০৩১৪
গবেষক ফ্রাঙ্ক গোডিও তাঁর সহকারীদের নিয়ে মিশরীয় উপকূলে ১৮ শতাব্দীর ফরাসি যুদ্ধজাহাজের খোঁজ চালাচ্ছিলেন। এই সময়েই তাঁরা একটি বিরাট পাথর দেখতে পান। একে একে খুঁজে পাওয়া যায় আরও পাঁচটি পাথরের। এই পাথরের নীচেই চাপা পড়েছিল হারিয়ে যাওয়া শহর।
০৪১৪
আজ থেকে প্রায় দু’হাজার সাতশো বছর আগে এই শহরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই শহরটি সেই সময়ে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র ছিল। সমগ্র শহরটিই জলের উপর অবস্থিত হওয়ায় বাড়ি থেকে মন্দির, দোকানপাট— নৌকাই ছিল যাতায়াতের মূল মাধ্যম। সেতুও ছিল পায়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য।
০৫১৪
নীল নদের ঠিক সামনেই অবস্থিত ছিল এই শহর, যার নাম হেরাক্লিওন। এই শহর ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। নীল নদের রানি হিসেবে ক্লিওপেট্রার অভিষেক ঘটেছিল এই শহরের মন্দিরেই। আবার ‘হেলেন অব ট্রয়’, যাকে মিশরীয় সভ্যতায় সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসাবে গণ্য করা হয়, তিনিও প্যারিসের সঙ্গে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এই শহরেই।
০৬১৪
সমুদ্রের তলা থেকে উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলি দেখে আন্দাজ করা হচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০ শতাব্দীতে ব্যবহৃত হত এই ধরনের মুদ্রা। ব্রোঞ্জের মুদ্রাগুলি রাজা টলেমির সময়কালের। গবেষকদের আন্দাজ, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সূচনা অবধি এই শহরে বসবাস ছিল মানুষের।
০৭১৪
পুরাতাত্ত্বিক ও গবেষকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে বার বার ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতেই এই শহরটি ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে এবং শহরবাসীরা নৌকাগুলিতে মূল্যবান সম্পদ নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই সময়ই কোনও এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে সমগ্র শহরটিই তলিয়ে যায়।
০৮১৪
হেরাক্লিওন শুধু বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবেই উল্লেখযোগ্য ছিল না, এর মন্দিরটিও ঐতিহ্য বহন করে। মিশরীয় ঈশ্বর আমুন-গেরেবের মন্দির ছিল এই শহরে। রাজবংশের যে কোনও শুভ কাজের সূচনা হত এই মন্দিরে আরাধনা করে। রানি ক্লিওপেট্রাও এই মন্দিরে নিয়মিত যেতেন বলে জানা যায়।
০৯১৪
১৯৩৩ সালে আবুকির উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় আরএএফ কমান্ডার প্রথম লক্ষ করেন, জলের নীচে কোনও কিছুর রেখা দেখা যাচ্ছে। ইতিহাসবেত্তারা মনে করেন, এটি হয়তো থনি বা হেরাক্লিওন-এর মধ্যে কোনও একটি শহর হবে। পরে জানা যায় থনি এবং হেরাক্লিওন, দু’টি শহর একই।
১০১৪
উদ্ধারকার্য শুরু হওয়ার পরই গবেষকরা এই শহর ও তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের ম্যাপ তৈরি করা শুরু করেন। চার বছর সময় লাগে কেবল শহরটির ম্যাপ বানাতে। পরে এই ম্যাপে যোগ হয় ক্যানোপাস নামে আরও এক নতুন শহরের, যা হেরাক্লিওনের পাশেই অবস্থিত ছিল।
১১১৪
বছর পনেরো ধরে উদ্ধারকাজ চালিয়ে গবেষকরা ৬৪টি জাহাজ, ৭০০টি নোঙর, ১৬ ফুট উচ্চতার দু’টি মূর্তি, প্রচুর সোনার গয়না, ব্রোঞ্জের মুদ্রা পান। মিশরীয় দেবতা আমুন-গেরেবের মন্দিরে ভাঙা অংশও উদ্ধার হয়।
১২১৪
উদ্ধারকাজের জন্য পুরাতত্ববিদরা প্রথমে ব্যবহার করেন ‘সাইড স্ক্যান সনার’-এর, যা সমুদ্রের শব্দতরঙ্গ আন্দাজ করে নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। সমুদ্রের তলায় উদ্ধারকার্যের মূল জায়গাটি নির্দিষ্ট হলে একে একে সমুদ্রের নীচে চাপা পড়ে থাকা প্রাচীন মূর্তি ও গয়নাগাটি তুলে আনেন।
১৩১৪
তাঁরা মন্দির ও অন্যান্য ভাঙা টুকরো পরীক্ষা করে পাথরের টুকরোর সঙ্গে মাটির রেখাও পান। গবেষকদের ধারণা, শহরের বাড়িগুলি মাটির তৈরি ছিল। সুনামির জল শহরে প্রবেশ করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই গোটা শহরের বাড়িগুলি গলে যায় এবং সম্পূর্ণ শহরটিই ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
১৪১৪
সমুদ্রের নীচে আজও রয়ে গেছে এই শহরের অংশ এবং তাকে জড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাস। গবেষক ফ্রাঙ্ক গোডিও বলেন, ‘‘আরও ১০০ বছর ধরে উদ্ধারকার্য চললেও হয়তো এই শহরকে সম্পূর্ণ ভাবে উদ্ধার করা সম্ভব নয়, এই শহরের হয়তো আরও অনেক ইতিহাস রয়েছে যা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।’’