মঙ্গলবার ঢাকায় সন্জীদা খাতুন। ছবি: বাপী রায় চৌধুরী।
রমনার বটমূলে তাঁর নেতৃত্বে সম্মিলিত সুরধারায় বৈশাখের প্রথম ঊষায় আজও নববর্ষের সূচনা হয় বাংলাদেশে। বাংলা সঙ্গীত ও সংস্কৃতি চর্চার পুরোধা সেই সন্জীদা খাতুন নব্বইয়ে। ‘ছায়ানট’ ও ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন’-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সংস্কৃতি চর্চায় তাঁর অবদান নিরন্তর মৌলবাদী চোখরাঙানিকে পরাস্ত করে বাঙালি সংস্কৃতিকে আজও বিকশিত করে চলেছে। ঢাকার ধানমন্ডিতে ছায়ানটের সংস্কৃতি ভবনে মঙ্গলবার বরণ করা হল সন্জীদা বা সকলের প্রিয় মিনু আপাকে।
কথন পর্বে নবতিপর শিল্পী জানালেন, পাঁচ বছর বয়সে দিদির ওস্তাদজির কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম শুরু তাঁর, অর্থাৎ ৮৫ বছর নিরন্তর বহমান সন্জীদার সুরধারা। অনুষ্ঠানে গাইলেনও কিশোরীবেলা থেকে প্রিয় যে রবীন্দ্রসৃষ্টি— ‘এসো এসো হে তৃষ্ণার জল’। পাকিস্তান আমলে শাসকদের নিষেধাজ্ঞা থামাতে পারেনি বাঙালি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর দায়বদ্ধতাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে বারে বারে উড়ে এসেছে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের হুমকির আগুন। ২০০১-এ রমনার অনুষ্ঠান রক্তাক্ত হল জঙ্গিদের পেতে রাখা বিস্ফোরকে। শিল্পী বলছেন, “সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সুফল নিয়ে আমাদের আত্মসন্তোষ বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল। বোঝা গেল, পূর্ণাঙ্গ মানুষ গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষার অভাব অতি প্রকট।” এ বার তিনি গড়ে তুললেন ‘নালন্দা’ শিশু-বিদ্যালয়, যেখানে পড়ার সঙ্গে নাচ-গান, আবৃত্তি-অভিনয় আর আনন্দময় শিক্ষায় শিশুর বিকাশ হবে পূর্ণাঙ্গ মানবে। এই কাজে ফিরিয়ে এনেছেন ব্রতচারীকেও।
শিল্পীর হাতে প্রাণ পাওয়া ‘ছায়ানট’-এর নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, “সর্বজন যেন বাঙালি জাতিসত্তাকে হৃদয়ে ধারণ করে বিশ্বমানব হয়ে ওঠেন, তার সাধনা করে চলেছেন মুক্তচিন্তা ও সঙ্গীতের পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা সন্জীদা খাতুন। বয়সের কারণে কিছুটা অসমর্থ হলেও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রে তিনি এখনও সচল ও সক্রিয়। আর তা আমাদের সবার জন্য সুসংবাদ।” আলীর কথায়— “উনি ও ওঁর সহযাত্রীদের তত্ত্বাবধানে লক্ষ ছাত্র ছায়ানট-এ সঙ্গীতশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাঁদের কাছে তিনি শুদ্ধ সঙ্গীত পরিবেশনা প্রত্যাশা করেছেন, আশা করেছেন তাঁরা শিল্পী হয়ে উঠবেন, বিনোদন তারকা নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy