Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অমিত শাহের ফোন এসেছে কি আসেনি, সরগরম ঢাকা

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কি আদৌ ফোন করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খোঁজ নিয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন এখন বাংলাদেশের মানুষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, বুধবার রাতে অমিত শাহ দিল্লি থেকে নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। তিনি খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াও পাল্টা তাঁকে ধন্যবাদ জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কি আদৌ ফোন করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খোঁজ নিয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন এখন বাংলাদেশের মানুষ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, বুধবার রাতে অমিত শাহ দিল্লি থেকে নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। তিনি খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াও পাল্টা তাঁকে ধন্যবাদ জানান। সোহেলের পাশে এ সময়ে দলের একাধিক প্রথম সারির নেতা উপস্থিত ছিলেন। একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও একই দাবি করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই অমিত শাহের ফোনের খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম।

কিন্তু আওয়ামি লিগের প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ এ দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁরা খবর নিয়ে দেখেছেন এই ফোনের দাবি ‘ডাহা মিথ্যে’। তিনি বলেন, তাঁরা জেনেছেন দিল্লি থেকে কোনও ফোন তো আসেইনি, বরং বিএনপি-র তরফেই দিল্লিতে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু অমিত শাহকে ধরা যায়নি। অমিত ও খালেদার মধ্যে কোনও কথাবার্তাও হয়নি। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও ফেসবুক পোস্টে বলেন, “আমি নিজে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, বিএনপি নিজেরাই ঢাকা থেকে চেষ্টা করেছিল জনাব অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলার জন্য, কিন্তু কথা হয়নি।”

বিজেপির মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ এ দিন দিল্লিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেও খালেদাকে তাঁর দলের সভাপতির ফোন করা বা না-করা নিয়ে একটি কথাও বলেননি। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক থেকেও সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়নি। ঘটনা হল, বুধবার অমিত শাহ দিল্লিতে ছিলেনই না। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার সূত্রে খবর, বিএনপি সাংবাদিক সম্মেলন করার পরেই তাঁরা বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের নজরে আনেন। ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছেন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজে এ বিষয়ের সত্যাসত্য অমিত শাহের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। অমিত জানিয়েছেন, তিনি তো ফোন করেনইনি, বরং বিএনপি-র তরফে দু’বার তাঁর দফতরে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দিল্লির বাইরে থাকায় যোগাযোগ হয়নি।

ঘটনা হল, ভারতের শাসক দলের সভাপতি বিএনপি নেত্রীকে ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন এই খবরে খালেদার গুরুত্ব বেশ বাড়ে। ঘরোয়া আন্দোলনে তিনি মানুষের সহানুভূতি ও দলীয় কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠলেও আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী মহল যে তাঁর জন্য উদ্বিগ্ন সে বার্তা বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যায়। প্রশ্ন উঠেছে, সেই জন্যই কি বিএনপি-র তরফে অমিতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল?

এই খবর অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে আজ আরও একটি ঘটনায়। বিএনপি-র সূত্রেই কাল সংবাদমাধ্যমের দফতরে মার্কিন প্রতিনিধি সভার বিদেশ বিষয়ক কমিটির একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়াকে যে ভাবে দফতরে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, তাঁর পুত্র তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, মার্কিন সংসদের ওই কমিটি তাতে গভীর উদ্বিগ্ন। তারা বাংলাদেশ সরকারের এই আচরণের নিন্দা করছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পরে আজ ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন প্রতিনিধি সভার বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, তাঁদের নামে আগে যে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে তা ‘মিথ্যা ও বানানো’। এমন কোনও বিবৃতি তাঁদের কোনও সদস্য প্রকাশ করেনি। এই বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে তা-ও ঠিক নয়। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের জাল বিবৃতি প্রকাশের’ নিন্দা করছে তারা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম খবর নিয়ে দেখেছে, লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারাই ওই বিবৃতি তাদের দফতরে পাঠিয়েছিলেন।

অমিত শাহের ফোন এবং মার্কিন প্রতিনিধি সভার বিদেশ বিষয়ক কমিটির বক্তব্য নিয়ে শোরগোলের পরে অনেকেই মনে করছেন, এ সব নিছকই সাজানো ঘটনা। একই উদ্দেশ্যে দু’টি ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। আওয়ামি লিগের দাবি, খালেদার অসুস্থতাও ভান, সাজানো নাটক। সোমবার তাঁর দফতরের সামনে থেকে ভিড় হটাতে পুলিশ ‘পেপার স্প্রে’ ছড়ালে বাইরে দাঁড়ানো খালেদার চোখে জল এসেছিল। হাঁচতে হাঁচতে তিনি ঘরে ফিরে যান। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ঝাঁঝ বড়জোর ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারে। কিন্তু সেটাকেই তিনি বড় করে দেখাতে চাইছেন। শাসক দলের নেতাদের দাবি, সে জন্যও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কাহিনি বোনা হতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, বিজেপি কেন বিএনপি-র দাবি নিয়ে চুপ? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন সব রকম ভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন খালেদাকে তাঁর দলের সভাপতির এই ফোনের খবর যে অনেক রকম প্রশ্নের জন্ম দেয়, বিজেপি নেতৃত্ব কি তা বুঝছেন না? যদি বোঝেন, তবে দলের মুখপাত্র কেন আজ সাংবাদিক সম্মেলনে তা খোলসা করলেন না? তবে কি বিজেপি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না, নাকি বিএনপি-র সঙ্গে ভবিষ্যৎ বোঝাপড়ার পথ খোলা রাখতেই মুখ বন্ধ রাখার কৌশল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amit shah khaleda jia bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE