Advertisement
২৪ মে ২০২৪

প্রেসিডেন্ট পলাতক, ইউক্রেনে স্বাগত বিরোধী নেত্রী

তিন মাসের রক্তাক্ত আন্দোলনের পরে উত্তাল ইউক্রেন এখন অনেকটাই শান্ত। এক দিকে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত আর অন্য দিকে বিরোধী-নেত্রীর মুক্তি এই দুই ঘটনার পরে এ বার কোন পথে হাঁটবে দেশ, উত্তর খুঁজছেন ইউক্রেনের ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ।

ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে ইউলিয়া টাইমাশেঙ্কো। ছবি: এএফপি।

ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে ইউলিয়া টাইমাশেঙ্কো। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কিয়েভ শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২২:৪৫
Share: Save:

তিন মাসের রক্তাক্ত আন্দোলনের পরে উত্তাল ইউক্রেন এখন অনেকটাই শান্ত। এক দিকে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত আর অন্য দিকে বিরোধী-নেত্রীর মুক্তি এই দুই ঘটনার পরে এ বার কোন পথে হাঁটবে দেশ, উত্তর খুঁজছেন ইউক্রেনের ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ।

বিদ্রোহ শেষে এখন তাঁদের অনেক প্রশ্ন। ক্ষমতা কার হাতে? ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ কোথায় পালিয়েছেন? আর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হচ্ছে, ইয়ানুকোভিচের মিত্র দেশ রাশিয়া কী ভাবে দেখছে গোটা বিষয়টিকে?

ইয়ানুকোভিচের গতিবিধি সম্পর্কে রবিবারও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। ইউক্রেনের কয়েকটি সংবাদ সংস্থার দাবি, দেশের পূর্বের শহর দোনেৎস্ক থেকে চার্টার্ড বিমানে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন ইয়ানুকোভিচ। কারও কারও দাবি, এই শহরে তাঁর জনসমর্থন আছে বলেই দোনেৎস্কে হয়তো আপাতত ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এ দিন তাঁকে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

আড়াই বছর জেলবন্দি থাকার পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টাইমোশেঙ্কোকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে গত কাল। পিঠে ব্যথার জন্য জেল-হাসপাতালে ছিলেন। তিনি কিয়েভে ফিরে এসেছেন। ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কিয়েভের ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে ৫০ হাজার মানুষের সামনে হুইলচেয়ারে বসে তিনি বলেন, “ইউক্রেনের ভয়ঙ্কর শাসকের দিন শেষ হয়েছে। এ বার আপনাদের দিন আসছে।” ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রশংসা করেন প্রতিবাদীদের।

২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইউলিয়া টাইমোশেঙ্কো। কিন্তু তিন বছরের মাথায় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁকে সরে যেতে হয়। আর সে বছরেই ভোটে জিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হন ইয়ানুকোভিচ। ২০০৮-এ টাইমোশেঙ্কোর সাত বছর জেল হয়। পশ্চিমী দুনিয়ার চোখে এই নেত্রী অবশ্য ‘রাজনৈতিক বন্দি’ ছিলেন। ২০০৪ সালে ‘অরেঞ্জ রেভোলিউশন’ থেকেই টাইমোশেঙ্কোর উত্থান। ওই সময়েও ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। সেই সময়েই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন টাইমোশেঙ্কো। সে বারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ইয়ানুকোভিচ। প্রাথমিক ভাবে তাঁর জয় হয়েছিল। কিন্তু সেই ফল বৈধ নয় বলে বিতর্ক ওঠে। প্রবল বিরোধিতার মুখে ফের নির্বাচন এবং ভোট গণনার পরে হেরে যান ইয়ানুকোভিচ, প্রেসিডেন্ট হন ভিক্টর ইউশচেঙ্কো।

ইউলিয়া টাইমোশেঙ্কোর মুক্তির খবরে খুশি আমেরিকা। হোয়াইট হাউস টাইমোশেঙ্কোর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে বলে জানানো হয়েছে এক বিবৃতিতে। ইউক্রেনের গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে আমেরিকা। তারা চায়, হিংসা ছেড়ে সব পক্ষই শান্তিপূর্ণ আলোচনায় আসুক।

ইউক্রেনের পার্লামেন্টের ভোটে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত। ২০০৪ সালে দেশে যে সংবিধান ছিল, সেই সংবিধান ফিরিয়ে আনায় সম্মতি দিয়েছে পার্লামেন্ট। ওই সংবিধান অনুযায়ী, দেশের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পাবে। যা প্রতিবাদীরাও চেয়েছিলেন। আপাতত স্পিকার ওলেসান্দর তুর্চিনভ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন। তুর্চিনভ অবশ্য টাইমোশেঙ্কোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেই পরিচিত।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের হদিশ না মিললেও এ দিন ইউক্রেনের বাসিন্দারা খোঁজ পেয়েছিলেন তাঁর আর এক গোপন ডেরার। কিয়েভ থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে মেঝহিহিরায় ৩৪৫ একরের বিশাল এস্টেট রয়েছে ইয়ানুকোভিচের। যার খোঁজ এত দিন জানত না অনেকেই। আর এস্টেটে ঢুকে ইয়ানুকোভিচের সম্পত্তির বহর দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে বহু দর্শকের। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ২০১০ সালে এখানে একটা ছোট বাড়ি কিনেছিলেন তিনি। তার পর গোটা এস্টেটটারই দখল নেন। সুন্দর বাগান, চিড়িয়াখানা, গল্ফ কোর্স, হেলিপ্যাড, গ্যারাজে সারি সারি ভীষণ দামি স্পোটর্স কার কী নেই সেখানে?

যে দেশের গড় আয় মাসে তিনশো পাউন্ডেরও কম, সেই দেশের প্রেসিডেন্ট এই বিলাসবহুল জীবনযাপনের বহরে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। ইয়ানুকোভিচের ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধব আর পরিবার ছাড়া খুব কম সংখ্যক মানুষই এই গোপন আস্তানায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। আজ সেখানে ঢুকে পার্লামেন্টের সদস্য এডুয়ার্ড লিওনোভ বলেন, “স্বৈরাচারী শাসকের এই প্রাসাদোপম বিনোদনের জায়গাটি আমরা জনতাকে দেখাতে চাই।” সাধারণ দর্শকের মধ্যে সের্হি রেমেজোভস্কি বলেন, “ভাবা যায় না, আমাদের অর্থে এই সব হয়েছে? মানতে পারছি না একেবারেই!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ukraine unrest kiev president Viktor Yanukovych
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE