Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মস্কোর বিরুদ্ধে ‘জিভাগো’কে অস্ত্র করেছিল সিআইএ, প্রকাশ নথিতে

জল্পনা ছিল অনেক দিন ধরেই। এ বার প্রকাশিত গোপন নথি থেকে সাফ জানা গেল, রুশ সাহিত্যিক বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ উপন্যাসকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেছিল আমেরিকা। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। জোসেফ স্তালিনের আমলের রাশিয়াতেও বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত মত রক্ষার বিষয়ে সচেতন ছিলেন বরিস পাস্তেরনাক।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

জল্পনা ছিল অনেক দিন ধরেই। এ বার প্রকাশিত গোপন নথি থেকে সাফ জানা গেল, রুশ সাহিত্যিক বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ উপন্যাসকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেছিল আমেরিকা।

ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। জোসেফ স্তালিনের আমলের রাশিয়াতেও বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত মত রক্ষার বিষয়ে সচেতন ছিলেন বরিস পাস্তেরনাক। কমিউনিস্ট একনায়কতন্ত্রের আদেশে রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত মানুষের পরিবারের পাশে দাঁড়াতেও পিছপা হননি তিনি।

‘ডক্টর জিভাগো’-র কাহিনিতেও তাই নভেম্বর বিপ্লব সম্পর্কে নিজের মতো করেই মূল্যায়ন করেছিলেন তিনি। প্রত্যাশিত ভাবেই সেই বই প্রকাশে রাজি হননি কোনও সোভিয়েত প্রকাশক।

কিন্তু তা সত্ত্বেও দিনের আলো দেখেছিল ‘জিভাগো’? মস্কোর এক ইতালীয় বই সংগ্রাহকের মাধ্যমে জিভাগো’-র একটি পাণ্ডুলিপি পান মিলানের প্রকাশক জিয়ানজিয়াকোমো ফেট্রিনেল্লি। মস্কো ও ইতালীয় কমিউনিস্ট পার্টির চাপ উপেক্ষা করে বইটি প্রকাশ করেন তিনি। ইতালীয় ভাষায় প্রকাশিত হয় ‘জিভাগো’।

বইটিকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাতিয়ার করার প্রস্তাব প্রথম দেয় ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা। তাদের প্রস্তাব মনে ধরে মার্কিনদের। এই বিষয়ে সিআইএ-কে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের প্রশাসন।

একটি গোপন মেমোতে সিআইএ-র শীর্ষ কর্তৃপক্ষ তার কর্মীদের জানান, “ব্যক্তি স্বাধীনতা সম্পর্কে পাস্তেরনাকের বক্তব্য সোভিয়েত শাসনতন্ত্রের মূল ধারণার বিরোধী। এই বইটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’ সিআইএ কর্তারা বুঝেছিলেন, বইটি সঠিক ভাবে ব্যবহার করা গেলে রুশ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন জাগবে, পাস্তেরনাকের মতো লেখকের রচনা কেন রুশে পড়া যাবে না? তাতে এমন কী আছে?

নিউ ইয়র্কের এক প্রকাশককে দিয়ে রুশ ভাষায় ‘জিভাগো’ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল সিআইএ। তা ব্যর্থ হয়। পরে নেদারল্যান্ডসের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। দ্য হেগের একটি প্রকাশন সংস্থা ‘জিভাগো’ প্রকাশের কথা ভাবনাচিন্তা করছিল। তাদের সাহায্যেই রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয় বইটি।

এ বার মার্কিন গুপ্তচর কর্তাদের সামনে প্রশ্ন ওঠে, কী ভাবে লৌহ যবনিকার ও পারে বইটি পৌঁছে দেওয়া যায়। এই কাজের জন্য ব্রাসেলসের বিশ্ব প্রদর্শনীকে বেছে নেন তাঁরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম বিশ্বে এত বড় প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রায় ১৬ হাজার রুশ নাগরিককে ভিসা দিয়েছিল বেলজিয়াম।

পুরো বিষয়টিতে মার্কিন সরকারের ভূমিকা গোপন রাখা হয়েছিল। তাই ভ্যাটিকানের সাহায্য নেয় সিআইএ। বিশ্ব প্রদর্শনীতে ভ্যাটিকানের প্যাভিলিয়নে রুশ নাগরিকদের হাতে গুঁজে দেওয়া হয় ‘জিভাগো’-র কপি। অনেকে পাতা ছিঁড়ে পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে যান।

বইটি রুশে প্রকাশের কথা পৌঁছেছিল পাস্তেরনাকের কানেও। প্যারিসের এক বন্ধুকে লেখা চিঠিতে তিনি প্রশ্ন করেন, “জিভাগো নাকি রুশে প্রকাশিত হয়েছে? ব্রাসেলসে কেউ কেউ দেখেছে বলেও শুনেছি।”

কেবল ব্রাসেলস নয়, গোটা ইউরোপেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘জিভাগো’-র কপি। রুশ নাগরিকদের সঙ্গে দেখা হলেই ওই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয় সিআইএ এজেন্টদের।

শেষ পর্যন্ত সারা বিশ্বে সমাদৃত হয় বইটি। নোবেল পুরস্কার পান পাস্তেরনাক। ১৯৬৫ সালে ‘জিভাগো’-র উপরে ভিত্তি করে সিনেমা তৈরি করেন হলিউডের পরিচালক ডেভিড লিন। মস্কোর মুখে চুনকালি লেগেছে মনে করে উল্লসিত হয় সিআইএ।

পাস্তেরনাকের অমর সৃষ্টি অবশ্য দেশকালের সীমা অতিক্রম করে বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE