‘ছেড়েছ তো অনেক কিছুই পুরনো অভ্যেস, অসুখ বিসুখ হওয়ার পরে জিলিপি সন্দেশ...’। জিলিপি সন্দেশ পাতে থাক বা না থাক, সবার নজর এখন স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে। ২০২০ বছরটি আমাদের খাবারের অভ্যাস শুধু নয়, পুরো জীবনেরই অভ্যাস পাল্টে দিয়েছে। বাড়ির তৈরি খাবারই এখন অমৃতসমান। সবার দৃষ্টি এখন নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর দিকে। আর তাই যা কিছু স্বাস্থ্যকর, সবই প্লেটে প্লেটে। বাইরে বেরিয়ে খাওয়ার দিনও এখন লিমিটেড। হোম ডেলিভারি সহায়। হুট করে ইচ্ছে হল, দাঁড়িয়ে চপের দোকান থেকে চপ-মুড়ি বা ফুটের চাউমিন খেয়ে নিলাম— তা এখন প্রায় নৈব নেব চ।
আমাদের যে যে অভ্যাসগুলো গত বছর পাল্টেছে সেগুলো মোটামুটি ভাবে যে এবছরও চলবে, তা তো বলাই বাহুল্য। এই প্রসঙ্গে ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’-এর এগজিকিউটিভ শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত জানালেন, “ওয়ান ডিশ মিল যেমন ট্রেন্ডে থাকবে আবার ট্র্যাডিশনাল ফুডেরও চাহিদা থাকবে।” ডেলিভারি প্রসঙ্গে তাঁর মত, “২০২০-তে যে অবস্থা হয়েছিল, তাতে মানুষ ডেলিভারিতে হুক্ড হয়ে গিয়েছিল। ডেলিভারির ট্রেন্ড থাকবে, কিন্তু এখন একটু একটু করে মানুষজন আবার রেস্তরাঁমুখোও হচ্ছেন। খাবারের পাশাপাশি সবারই এখন প্রধান চিন্তা হাইজিন নিয়ে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন।”
একনজরে এবার দেখে নেওয়া যাক, কী কী হতে পারে ২০২১-এর ফুড ট্রেন্ডস—
• বাড়িতে খাওয়ার যে অভ্যাস গড়ে উঠেছে ২০২০-তে, তা ২০২১-এও খুব একটা বদলাবে না। রেস্তরাঁ, খাবারের ঠেক খুললেও একেবারে উপচে পড়া ভিড় হবে, এমনটা নয়।
• বাইরের খাবার বাড়িতে আনিয়ে খাওয়ার যে চল, তা অব্যাহতই থাকবে। হোম ডেলিভারি, ক্লাউড কিচেনের রমরমা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
• লোকাল খাবারের উপরে মানুষের যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তা থাকবে। আসলে লকডাউনের সময় থেকে স্থানীয় সব কিছুর উপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। লোকালই তো তখন বাঁচিয়েছে, প্লেট এবং পেট ভরিয়েছে।
• প্রোটিনের যে সমস্ত বিকল্প, যেমন প্ল্যান্ট প্রোটিন, এগুলোর চাহিদা থাকবে। প্ল্যান্ট বেসড ডায়েটের ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে।
• প্রাতঃরাশ মানেই ছিল তাড়াতাড়ি একবাটি সিরিয়াল, কিছু ফল ইত্যাদি, ইত্যাদি। অধিক সংখ্যক মানুষ এখনও বাড়ির পরিধি থেকেই কাজকম্মো সব চালাচ্ছেন। আর তাই জমিয়ে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার ট্রেন্ড ২০২১-এও চলবে। নানা ধরনের ইন্টারেস্টিং জলখাবারের ছবি আমরা দেখব সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে।
• ভার্চুয়াল কুকিং ক্লাসের রমরমা আরও বাড়বে।
• বাড়িতে তৈরি রান্নার কদর এখন সব থেকে বেশি। তাই স্থানীয় হোম কুক, বেকারদের এ বছরও চাহিদা থাকবে। আরও বৃদ্ধি পাবে এঁদের সংখ্যা।
• রেস্তরাঁয় ডিজিটাল মেনুর চাহিদা বাড়ছে ক্রমশ। রেস্তরাঁর মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব রাখতে সাহায্য করে তা। আর তাই ডিজিটাল মেনুর চাহিদা আরও বাড়বে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মাল্টিভিটামিন বা যে সমস্ত ফুড সাপ্লিমেন্ট রয়েছে, তাদের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
• পুরনো হারিয়ে যাওয়া খাবার বা পাকপ্রণালী আবার পাকশালে ঢুকে পড়েছে। ঠাকুমা-দিদিমার তৈরি রান্না থেকে টোটকা, সবই আবার ফিরে আসছে।
• সবজি বা ফল যে ভাবে পরিষ্কার করে স্টোর করা হচ্ছে, সেই ট্রেন্ডও বজায় থাকবে। পরিচ্ছন্নতাই জিয়নকাঠি।