সারা পৃথিবীর মানুষই জানেন যে বাঙালিরা আদতে ঘরকুনো এবং বইপ্রেমী। আরাম করে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই পড়ে যেতে আমাদের একটুও ক্লান্তি বোধ হয় না। সম্ভবত সেই জন্যই কলকাতার বুকের উপর গত দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তৈরি হয়েছে একের পর এক গ্রন্থাগার।
কিছু কিছু লাইব্রেরি কালের নিয়মে ক্রমশ বন্ধ হয়ে গেলেও যে সব প্রতিষ্ঠান আজও বইয়ের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার নিয়ে আমাদের আকৃষ্ট করে রেখেছে, তাদের অবদান কলকাতার মানুষ ভুলতে পারবেন না কখনও। এই সব গ্রন্থাগার এখনও বইপ্রেমী বাঙালি মানুষজনের তীর্থক্ষেত্র।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি: এই গ্রন্থাগারটিকে কলকাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরি বলে থাকেন অনেকেই । ভারতে উৎপাদিত মুদ্রিত সামগ্রী সংগ্রহ, প্রচার ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে অনুমোদিত এটি। গত একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জাতীয় গ্রন্থাগারটি তার স্বর্ণময় অতীত ইতিহাস বহন করে বইপ্রেমীদের অবলম্বন হয়ে রয়েছে।
এখানে চল্লিশ লক্ষেরও বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। এবং এটি এই দেশের বিভিন্ন ভাষায় বই এবং পত্রিকার বৃহত্তম সংগ্রহালয়-গুলির মধ্যে একটি।
ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে অসমীয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম, মারাঠি, ওড়িয়া এবং পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু ও উর্দু ভাষার জন্য পৃথক ভাষা বিভাগও রয়েছে।
এশিয়াটিক সোসাইটি: ১৭৮৪ সালে স্যার উইলিয়াম জোনস প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি । গোটা বিশ্বেই বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের ধারায় এশিয়াটিক সোসাইটির প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে ক্রমশ পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও এশিয়াটিক সোসাইটির মতো একই শিরোনামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।
এখানে সাহিত্য, ভাষা বিশ্বকোষ এমনকি, বাংলার স্বাধীনতার থেকে শুরু করে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা পর্যন্ত সব ধরণের বই পাবেন। গবেষক এবং বইপ্রেমী বাঙালির জন্য এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগার গত দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কলকাতায় একটি পীঠস্থান।
বেঙ্গল লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন: ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই গ্রন্থাগারটির প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এতে বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের বই তথা গ্রন্থাগার, তথ্য বিজ্ঞান এবং রেফারেন্স টুলস সম্পর্কিত পাঁচ হাজারেরও বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।
১৯৩৩ সালে অল বেঙ্গল লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশনের নাম পরিবর্তন করে বাংলায় বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদ করা হয়।
রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার লাইব্রেরি: কলকাতার গোলপার্কে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারে প্রায় ২০৩৭৬৬টি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। এই লাইব্রেরিটি রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউটের অধীনে কিন্তু জনসাধারণের জন্যও উন্মুক্ত।
এই স্থানটির বিশেষত্ব ‘ইন্ডোলজি’ বা প্রাচ্যবিদ্যায় এখানকার কার্যকর্তাদের বিশেষ আগ্রহ। গ্রন্থাগারটি সাধারণ, শিশু ও জুনিয়র গ্রন্থাগার নামে তিনটি শাখায় বিভক্ত। এই বিপুল সংখ্যক বই ছাড়াও এটিতে অনেক বছর ধরেই সংগীত এবং আবৃত্তির একটি বিস্তৃত তথ্যভাণ্ডার রয়েছে।