ফেসবুকের স্মৃতি-দেওয়ালে কয়েক দিন আগেই ভেসে উঠেছে এই শুভেচ্ছাবার্তা— ‘শরৎ মেঘের ভাসল ভেলা/ কাশ ফুলেতে লাগল দোলা/ ঢাকের ওপর পড়ুক কাঠি/ পুজো কাটুক ফাটাফাটি।’ মনে পড়ে গেল, আশ্বিন মাস এসে গিয়েছে। এখন দুর্গাপুজো।
গত পনেরো বছর ধরে আছি বাংলার ছোঁয়া থেকে অনেক দুরে, সুদূর পশ্চিম আফ্রিকার কোৎ-দি’ভোয়া বা আইভরি কোস্টে। বাংলার মতো এখানকার আকাশে হয়তো ‘সাদা মেঘের ভেলা’ নেই। নেই কাশফুল বা শিউলির সুবাস। তবু এ সময়টায় মন বড় উতলা হয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে উমার মতো আমিও কয়েক দিনের জন্য ঘরে ফিরে যাই।
মন ছুটে যেতে চাইলেই বা উপায় কোথায়! এমন নয় যে, আফ্রিকার কোনও দেশেই দুর্গাপুজো হয় না। কিন্তু এই ফরাসিভাষী দেশে সেই গুড়ে বালি। সুতরাং কোমর বেঁধে লেগে পড়ি, পুজোর দিনগুলো একটু অন্য ভাবে কী করে কাটানো যায়।
আরও পড়ুন: পাঁচ দিনের পুজো বোহেমিয়ায়
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত অবশ্য ছবিটা অন্য রকম ছিল। আমরা কয়েক জন বাঙালি একজোট হয়ে আমাদের ছোট্ট দুর্গাপুজো শুরু করেছিলাম। পুজোর সঙ্গে ‘ফাউ’— নিখাদ বাঙালি সাজপোশাক, ভূরিভোজ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর পর দমকা হাওয়ার মতো এল গৃহযুদ্ধ। পুরনো বন্ধুরা কেউ ফিরে গেলেন দেশে, কেউ চলে গেল অন্য কোনও দেশে। আমরা অবশ্য রয়ে গেলাম এখানেই।
যুদ্ধ শেষ হল। দেশের এল উন্নতির নতুন জোয়ার। হাজির হল অসংখ্য বিদেশি সংস্থা। আর তাদের হাত ধরে এলেন বেশ কিছু নতুন বাঙালি।
কিন্তু দেখলাম, এই নব্য-বাঙালিরা একটু অবাঙালি ছাঁচে গড়া। দুর্গাপুজোর সাদামাটা ধরনটি হয়তো টানে না তেমন। বেশ কয়েক বছর চেষ্টা করেছিলাম, ফের দুর্গাপুজো শুরু করতে। কিন্তু দেখলাম, সবাই নিজের কাজ, পরিবার নিয়ে বড়ই ব্যস্ত। ডাকলে এক-আধ ঘণ্টা কাটিয়ে যাবেন, খরচেও কার্পণ্য করবেন না হয় তো। কিন্তু এক সাথে কাঁধ মিলিয়ে খেটে দুর্গাপুজো করার মতো সাহায্যের আজ বড্ড অভাব। তাই আমাদের সেই ছোট্ট পুজোর নটে গাছটি মুড়িয়ে গেল।
আরও পড়ুন: ১০ ইউরো চাঁদা দিয়ে শুরু হয় প্রথম সর্বজনীন
তবু চেষ্টা করেই যাব। এ বছর না হলেও যদি অদূর ভবিষ্যতে দুর্গোৎসবের এক ‘সর্বজনীন’ ছবি তুলে ধরতে পারি!