নিজস্ব চিত্র
এই সময়টা বড় অদ্ভুত। শেষ শরতের ঝরা পাতা, হিমেল হাওয়া, — প্রকৃতি যখন ধীরে ধীরে শীতের দরজা খুলছে, তখনই টেমস নগরী মেতে ওঠে আলোর খেলায়। শুধু দীপাবলি বা কালীপুজো নয়, এইখানেই মিশে যায় গাই ফক্স নাইটের ধুমধাম। প্রবাসে থাকা বাঙালিরা যেন এই তিন উৎসবকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলে, আর সেই বাঁধনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে লন্ডনের দক্ষিণের ক্রয়ডন শহরতলি।
নিজস্ব চিত্র
ক্রয়ডন বেঙ্গলি কনেকশনের পুজো মণ্ডপ। চরকিবাজির মতো ঘুরতে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের ভিড় এসে থমকে যায় ইস্ট ক্রয়ডন ইউনাইটেড রিফর্ম চার্চের বিশাল হলঘরে। কুমোরটুলি থেকে জাহাজে চেপে এসেছেন শ্যামা মা। এক ঢাল কালো চুল, টানাটানা চোখে সজল হাসি। ক্লান্তির রেশ থাকলেও, লাল বেনারসি শাড়িতে জননী যেন এ বাড়িরই মেয়ে। ভিড় উপচে পড়েছে। এসেছেন স্থানীয় মেয়র, মেম্বার অফ পার্লামেন্ট, কাউন্সিলররা।
নিজস্ব চিত্র
বিশুদ্ধ উচ্চারণের সংস্কৃত মন্ত্রে দীপান্বিতা কালীমুর্ত্তি জাগ্রত হয়ে ওঠেন। ভিড়ের মাঝে কানে আসে মন্ত্রধ্বনি: ‘কালী করাল বদনা বিনিষ্ক্রান্তাসিপাসিনী— বিচিত্র খট্টাঙ্গধরা— নরমালা বিভূষণা’। দীপমালার নরম আলোয় জাঁকজমক থাকলেও, তা কোথাও উগ্র নয়। এই আয়োজন মনকে বাংলার মাটির সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে বেঁধে ফেলার ডাক দেয়। শেষ বিকেলে হিমেল ঠান্ডা যখন জাঁকিয়ে পড়ে, তখন কালো আকাশ ভেদ করে কালপুরুষ, সপ্তর্ষিমন্ডল আর ধ্রুবতারা উঁকিঝুঁকি দেয়।
নিজস্ব চিত্র
একই সময়ে লন্ডনের অন্য প্রান্তে জ্বলছে গাই ফক্সের কুশপুতুল। ১৬০৫ সালে রাজা জেমসের আমলে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পাওয়ার স্মৃতিতে আজও সেই ‘বন ফায়ার নাইট’ পালিত হয়। আলোকিত এই উৎসব যেন রাবণবধের দীপাবলির মতোই অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর জয়গান।
নিজস্ব চিত্র
পুরাণের রামের রাবণ বধের গল্পের সঙ্গে এই উৎসবের মিল চোখ এড়ায় না। দীপাবলি যেমন রামের রাজা হওয়ার গল্প, তেমনই বন ফায়ার নাইট যেন গাই ফক্সের মৃত্যু আর রাজা জেমসের শহরবাসীকে রক্ষা করার গল্প।
হোমাগ্নির টিকা কপালে নিয়ে কচিকাঁচারা যখন বাইরে বেরোয়, তখন আকাশ জুড়ে আলোর মালা। আজকের রাতে এক টুকরো ভারতবর্ষ যেন উঠে এসেছে ক্রয়ডনের মাটিতে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।