Durga Puja nostalgia

‘পুজোয় একবার ঠান্ডা পানীয়র স্টল দিয়েছিলাম’, বললেন কৌশিক সেন

এ বছরের পুজোর রংটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। আসলে কিছুদিন আগে আমার শাশুড়ি-মা চলে গেলেন। সেই সঙ্গে পুজোটাও ম্লান হয়ে গেল।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৩
Share:

এ বছরের পুজোর রংটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। আসলে কিছুদিন আগে আমার শাশুড়ি-মা চলে গেলেন। সেই সঙ্গে পুজোটাও ম্লান হয়ে গেল।

Advertisement

আমার শ্বশুর বাড়িতে দুর্গা পূজা হয়। আমার স্ত্রী রেশমির বাড়ির পুজোটা আমার কাছে মূল্যবান। ওটা শরিকি পুজো। এ বছর ‘নমো নমো’ করে হবে। আমার খুব একটা যাবার ইচ্ছে নেই।

ঠাকুর-দেবতা, অঞ্জলি এই সব বিশ্বাস না করলেও পুজোকে ঘিরে উৎসবটা খুব ভাল লাগে আমার। ভাল লাগে বরণ করা, আরতি, অঞ্জলি দেখতে।

Advertisement

রেশমির মায়ের হাতের লুচি ছিল অসাধারণ। ৫০টা লুচি ভাজলে ৫০টাই সমান ভাবে ফুলত। ওঁর সঙ্গে সম্পর্কটাও ছিল মা-ছেলের মতো। শাশুড়ি জামাইয়ের মতো নয়।

তাই এ বছর পুজো নিয়ে ভাবছি না। আমার মায়ের কাছে দু দিন অন্তত যাব, এটা ঠিক করে রেখেছি। আর যদি বেরোই ঠাকুর দেখার কোনও ব্যাপার থাকবে না। বন্ধুবান্ধবের বাড়ি আড্ডা হতে পারে। কিংবা আগে থেকে বুকিং করে রেস্তরাঁয় খেতে যেতে পারি।

আমাদের দলের কোনও নাটক নেই পুজোর মধ্যে। পুজোর ঠিক আগে এবং পরে আছে। ইচ্ছে হলে পুজোয় ভাল নাটক থাকলে দেখতে যেতে পারি। আসলে কী, খারাপ সিনেমা হলেও দেখে টাইম পাস করা যায়। কিন্তু দেখার যোগ্য নয়, এমন নাটক দেখা খুব কঠিন।

পুজো বলতেই ছেলেবেলার কথা মনে আসে। দক্ষিণ কলকাতার ২৩-এর পল্লির পুজোর পাশেই ছিল আমাদের বাড়ি। এখনও আছে সেই বাড়ি। মা থাকেন ওখানে। জিতেন পাল প্রতিমা গড়তেন ও চক্ষুদান করতেন মণ্ডপেই। সেই সময় পুজোয় একটু শীতশীত পড়ত। মা সোয়েটার পরিয়ে দিতেন। আর তারপর আমরা সারারাত ঠাকুর গড়া দেখতাম। এখন আর ২৩-এর পল্লি পুজোয় সে মজা নেই। মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়ে সেখানে এখন ধাতব স্থায়ী প্রতিমা। সারা বছরই ভক্তের ভিড়।

পুজোর সময় আমার ছেলেবেলায় প্রচুর জামাকাপড় হত। দু’বেলা পুজোর পাঁচ দিন নতুন জামা প্যান্ট। আসলে আমি তো একমাত্র সন্তান। তাই এত জামাকাপড় বাবামা কিনে দিতেন। অন্যদিকে রেশমিও এক সন্তান। পুজোয় অনেক পোশাক হত ওরও। পুজোর আগে বাটা থেকে নতুন জুতো কেনা হত। রাতে সেই জুতো বালিশের পাশে নিয়ে নতুন জুতোর গন্ধ শুকতে শুকতে ঘুমোতে যেতাম। সে কী উত্তেজনা!

মনে পড়ে পুজোয় একবার ঠান্ডা পানীয়র স্টল দিয়েছিলাম। বড়রাই টাকা দিয়েছিলেন। তার পর বিরাট টাকাপয়সা গচ্চা গেল। ৮৭-৮৮ সালে পুজো প্যান্ডেলের পাশে কমিউনিস্ট পার্টির বুক স্টলে ডিউটি করতাম। এই কাজটা আমার বেশ ভাল লাগত।

তবে আমার আজও মনে হয় দুর্গা পুজোই একমাত্র পুজো যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আনন্দ করেন সকলে। কলকাতার পুজোর দেখতে আসেন বাংলাদেশের কত মুসলিম পরিবার। আসেন ভিন প্রদেশের মানুষজন। এমন বৈষম্যহীন উৎসব বিরল।

ভাল লাগে বাড়ির পুজোগুলো দেখতে। ভবানীপুর অঞ্চলে বেশ কয়েকটা বাড়ির পুজো হয়। আমাদের হরিশ মুখার্জি রোডের বাড়ি থেকে এগোতে বসন্ত বোস রোডের একটি বাড়িতে খুব সুন্দর পুজো হয়। সাবেকি পুজোর সেই বাড়ির গৃহিনী হলেন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল। রেশমির সঙ্গে প্রেম হওয়ার পর আমরা দু'জন ঠাকুর দেখতে যেতাম।

আমাদের বাড়ির কাছেই হাজরা পার্ক। হাজরা পার্কের পুজোয় মেলা বসত। থাকত সাবেকি কাঠের নাগরদোলা। সেই নাগরদোলায় আমি আর রেশমি চড়তাম। আমরা দু’জন মিলে বকুলবাগানের ঠাকুর দেখতাম। চলে যেতাম উত্তর কলকাতায়। বাগবাজারের পুজো তো দেখতামই। সেই সঙ্গে আহিরীটোলা, মহম্মদ আলি পার্কের ঠাকুর অবশ্যই দেখতাম।

পুজোর সময় আরেকটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগত। সেটা হল খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম। উল্টোপাল্টা সময়ে যা খুশি খাওয়া।

একটা কথা পুজো নিয়ে বলতে চাই। পুজোর সময় প্রায় সব ক্লাবকেই সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয় যে সব ক্লাবের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়, সেই ক্লাবগুলোকেই বাছাই করে অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদানের একটা মাপকাঠি তৈরি হোক। অন্যথায় আমাদের রাজ্যের যে অর্থনৈতিক কাঠামো সেখানে এই যত্রতত্র অনুদান ব্যাপারটা অপচয় বলে মনে হয়। তা ছাড়া কোনও একটি বিশেষ ক্লাবের পুজোতে প্রতিমাকে প্রচুর প্রচুর সোনার গহনা পরিয়ে যে আড়ম্বর হয় তাতে পুজোর স্বাভাবিক মাধুর্য ক্ষুণ্ণ হয়। লোকের ভিড় বাড়ানোর এই হুজুগ সরল এবং স্বাভাবিক মনে হয় না।

আজকাল পুজোর শেষটা আমাকে বিষণ্ণ করে। পুজো এলেই বিজয়া দশমীর পর গুরুজনের সঙ্গে দেখা করা, প্রণাম করার পালা আসে। যত বয়স বাড়ছে প্রণাম করার পা-গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমার বাবা নেই, শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। নেই মৃণাল জেঠু, গীতা জ্যেঠিমা। নেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাবার পরে তিনিই আমার গুরু। নেই কাকিমাও। শঙ্খ ঘোষ নেই। দেবেশ রায় নেই। এমনি করে হারাতে হারাতে চলেছি! প্রণাম করব কাকে?

অনুলিখন: সংযুক্তা বসু।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement