Tathagata Mukherjee

সাদা থান পরা মহিলা কী করে শূন্যে মিলিয়ে গেলেন! আজও এর উত্তর পাইনি: তথাগত

ছোটবেলায় দু-দু’বার এমন দুটো অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যা আজও মনকে নাড়া দেয়। অথচ অনেক ভেবেও যার কোনও ব্যাখ্যা আজও বার করতে পারিনি।

Advertisement

তথাগত মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ১২:৪৭
Share:

ছোটবেলায় দু-দু’বার এমন দু'টি অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যা আজও মনকে নাড়া দেয়।

অন্ধকার ঘরে প্রদীপের আলো জ্বালালে তা শুধু চারপাশটুকুকেই আলোকিত করে। কিন্তু বাকি সবটাই তো থাকে অন্ধকারে। দেখা যায় না কেবল। ভূত নিয়ে বিশ্বাস, অবিশ্বাস ব্যাপারটাও বোধ হয় খানিকটা সে রকম। যতটুকু দেখতে পাচ্ছি, ততটুকু আছে। বিশ্বাসের জায়গা সে পর্যন্তই। কিন্তু তার বাইরেও তো অনেক কিছুই থাকে। যার ব্যাখ্যা মেলে না। ভয়ের ছবি দেখতে ভালবাসি, বানাইও বটে। কিন্তু নিজে ভূতে বিশ্বাস করিনি কখনও। তবে ছোটবেলায় দু-দু’বার এমন দু'টি অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যা আজও মনকে নাড়া দেয়। অথচ অনেক ভেবেও যার কোনও ব্যাখ্যা আজও বার করতে পারিনি।

২০০২-০৩ সালের কথা। সে বছর ভয়াল এক ঘূর্ণিঝড়ে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল ওড়িশা। তার বেশ কিছু দিন পরে পুরী গিয়েছিলাম আমরা। আমি, মা, বাবা এবং আমার দিদিমা। কোণার্কের মন্দির ঘুরে পুরী ফিরছি গাড়িতে। অমাবস্যার রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটছে। মাঝে সাঝে রাস্তার দু’ধারে স্থানীয় লোকজনের দেখা মিলছে। তার পর আবার জনশূন্য। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তখন ঝাউবন উপড়ে গিয়েছিল অনেক। রাস্তার ও পারে নজর গেলে বেবাক ফাঁকা। দোকানপাটও নেই আশপাশে। নিঝুম, নিশ্চুপ একটা রাস্তা ধরে হু হু করে গাড়ি ছুটছে। শব্দ বলতে শুধু সমুদ্রের গর্জন। আচমকা সজোরে ব্রেক কষল গাড়ি। আমরা প্রত্যেকেই ছিটকে গিয়েছি সিট থেকে। বাবা নামলেন, গাড়ির চালকও। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। বাবা ফের রওনা হতে বলে আবার গাড়িতে উঠে বসলেন। কী হয়েছিল, কেন ব্রেক কষতে হল, কেনই বা আবার রওনা হচ্ছি— হাজার প্রশ্নেও বাবা কোনও উত্তর দিলেন না। স্বর্গদ্বারের কাছে পৌঁছে গাড়ি গেল খারাপ হয়ে। শেষমেশ হোটেলে ফিরে বাবা যা বললেন, শুনে আমরা হতভম্ব।

কোণার্ক থেকে ফেরার রাস্তায় মাঝে মাঝে স্থানীয় লোকজন দেখছিলামই। তখন নাকি ধবধবে সাদা থান পরা এক মহিলাও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। এবং আচমকা নাকি তিনি ছুটে গাড়ির সামনে এসে পড়েন। আমাদের গাড়িটা সজোরে ব্রেক কষে সে কারণেই। অথচ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে বাবারা দেখেন, কেউ কোত্থাও নেই। মহিলা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছেন। অত কম সময়ের মধ্যে তাঁর উধাও হওয়া অসম্ভব। আর যেটা অবাক করার মতো ব্যাপার, তা হল— বাবা আর আমাদের গাড়িচালক দু’জনেই সেই মহিলাকে দেখেছিলেন। যে কোনও এক জন দেখলে না হয় মনের ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু একই সময়ে দু’জনেরই একই ভুল হয় কী করে!

Advertisement

ধবধবে সাদা থান পরা এক মহিলা আচমকা নাকি ছুটে গাড়ির সামনে এসে পড়েন।

আর এক বার ছুটিতে গিয়েছিলাম বিহারে। সে বারও আমি বেশ ছোট। বাবা-মা-আমি, গাড়িচালক ও তাঁর বন্ধু মিলিয়ে পাঁচ জনের দল যখন রাজারাপ্পা পৌঁছল, বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। ওখানে এমনিতেই হোটেল নেই। আমরাও ঝোঁকের বশে রাত্রিবেলায় গিয়ে পৌঁছেছি। শেষমেশ এক ভাতের হোটেলের কর্মীরা ওখানেই এক আশ্রমে আমাদের রাত কাটানোর বন্দোবস্ত করে দিলেন। আর বলে গেলেন, ওখানে মাঝে মাঝে সেনাবাহিনী টহল দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের ঝক্কি এড়াতে দরজা না খোলাই ভাল। আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। আচমকা যেন ভারী বুটের চলাফেরা, ছুটোছুটির আওয়াজ হতে লাগল। তার পর লাগাতার জানলা-দরজা সবেতেই অনবরত ঠক ঠক। মনে হল, মাথার উপরে অ্যাসবেস্টসের চালের উপরেও কেউ যেন দাপাদাপি করছে। এখানে বলে রাখা ভাল, ওই বাড়িটা আসলে পুরনো এক রাজবাড়ি। পিছন দিকটা তার ভগ্নাবশেষ। আর সামনে মোটামুটি অক্ষত হলঘরটা এখন আশ্রম হিসেবে ব্যবহার হয়। এবং আমরা ছাড়া বাকিটা জনমানবহীন। বাইরে বুটের আওয়াজ, দরজা-জানলায় ধাক্কাধাক্কি, অ্যাসবেস্টসের চালের উপর দাপাদাপি চলল বহুক্ষণ। কী ঘটছে দেখার তুমুল ইচ্ছে থাকলেও বাবা কিছুতেই বেরোতে দেননি।

সেই শিহরণ ভুলতেও পারিনি এত বছরে!

পরদিন সকালে গিয়ে আমরা যথারীতি ভাতের হোটেলে বললাম রাতের অভিজ্ঞতার কথা। ওরা দেখি হতবাক। আগের রাতে নাকি সেনা টহল হয়ইনি! হতেই পারে, স্থানীয় কেউ আমাদের ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেকেলে রাজবাড়ির উচ্চতা অনেকখানি। আর হলঘরটাও ছিল আলাদা মতো। আশপাশে কিছু নেই। বাইরে থেকে ছাদে ওঠার মতো কোনও ব্যবস্থাও ছিল না। তা হলে ছাদে কেউ উঠল কী করে? তা ছাড়া, বাড়ির জানলা-দরজাও বেশ দূরে দূরে। সাধারণ মানুষের পক্ষে একটি থেকে অন্যটিতে পৌঁছতে খানিক সময় লাগার কথা। তা হলে সবক’টিতে একসঙ্গে অনবরত আওয়াজই বা হয় কী করে!

ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি আজও। সেই শিহরণ ভুলতেও পারিনি এত বছরে!

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন