Kali Puja special

স্নানঘরে যেটা ছিল, সেটা তত ক্ষণে ঘরে চলে এসেছে... এক সময় মনে হল যেন বিছানায় বসল: দর্শনা বণিক

ভৌতিক অভিজ্ঞতা আমার এক বার হয়েছিল। আমি তখন 'ডিবক' ছবির শ্যুটিং করছিলাম মরিশাসে।

Advertisement

দর্শনা বণিক

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৩৪
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

ভৌতিক অভিজ্ঞতা আমার এক বার হয়েছিল। আমি তখন 'ডিবক' ছবির শ্যুটিং করছিলাম মরিশাসে। ওটা একটা ভূতের ছবি ছিল। আর সেই ছবির শ্যুটিংয়ে পর পর কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছিল। অনেকেই বলেন ভৌতিক ছবি করতে করতে নাকি নেতিবাচক একটা শক্তি কাজ করে। জানি না এটার সঙ্গে মনস্তত্ত্বের কোনও যোগ আছে কিনা।

Advertisement

তবে সে বার শ্যুটিংয়ে রোজ রাত তিনটে নাগাদ প্রত্যেকের সঙ্গে কিছু না কিছু ঘটছিল। কারও ঠিক ওই সময় ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, কারও সঙ্গে অন্য কিছু হচ্ছে, কেউ পড়ে যাচ্ছে...। এক দিন তো এক জন বাজে ভাবে গর্তে পড়ে যান। তিনি জানিয়েছিলেন, 'আমি তো গর্ত পেরিয়ে গিয়েছিলাম। গর্ত পিছনে ছিল, মনে হল কেউ যেন আমায় ধরে তাতে ঢুকিয়ে দিল।' সেটে আমাদের যিনি স্টিল ফটোগ্রাফার ছিলেন তাঁর এক দিন রাত তিনটে নাগাদ ঘুম ভেঙে যায়। তিনি উঠে দেখেন তাঁর সঙ্গে রুমে আরেক জন যিনি ছিলেন তিনি স্নান করছেন। সেই লোকটিকে যখন ফটোগ্রাফার জিজ্ঞেস করেন যে ‘এখন কেন স্নান করছিস?’ তিনি জবাবে বলেন, 'আমি কিছু একটা দেখে ফেলেছি। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে, তাই আমায় এখনই স্নান করে নামাজ পড়তে হবে।' বা এমন একটা কিছু তিনি বলেন।

এ বার রোজ রোজ এমনটা শুনতে শুনতে না এমন হয়ে গিয়েছিল...। এক দিন আমি ঘুমাচ্ছি রাতে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়িতে দেখি ঠিক রাত ৩টে বাজে। সবার থেকে একটাই কথা শুনতাম যে রাতে ঘুম ভাঙলেই সময় দেখছে রাত ৩টে। না ২.৫৯ না ৩.০১! কাঁটায় কাঁটায় ৩টে। তো সে দিন যখন হোটেলের ঘরে আমার ওরম ঠিক রাত ৩টে নাগাদ ঘুমটা ভাঙে আমার হঠাৎ স্ট্রাইক করে, 'আরে এ বার কি তবে আমার পালা? আমি কি আজ কিছু দেখব বা শুনব?' কিন্তু আমি নিজেকে বোঝাই যে, 'না আমি বেশি ভাবব না, বরং বাথরুম থেকে ঘুরে আসি।'

Advertisement

বাথরুমে যখন ঢুকি, মনে হতে থাকে যে কিছু একটা আছে। তাও নিজেকে বোঝাই যে না, এটা বেসিনের শব্দ, বা পাম্প চলছে বা বাইরে খুব হাওয়া দিচ্ছে ফাঁকা জায়গা যেহেতু। কিন্তু দেখি যে না, কোথাও কিছু নেই। আমি ঘরে চলে আসি। আমার ব্যাগে সব সময় ঠাকুরের ছবি থাকে। সেটা নিয়ে শুই।

বাথরুমে গিয়ে আমি যেটা অনুভব করেছিলাম, সেটা তত ক্ষণে আমি ঘরেও অনুভব করা শুরু করে দিয়েছি যে কিছু একটা আছে। এবং এটাও বুঝতে পারছিলাম যে যেটাই থাকুক না কেন সেটা খুব অশান্ত। খুব ভয় লাগছিল। আমার পাশে বিছানা অনেকটা ফাঁকা পড়ে ছিল, কারণ আমি একাই ছিলাম। একটা সময় মনে হল বিছানায় যেন কেউ বসল। মোটা গদি থাকলে কেউ বসলে বোঝা যায় যেমন, ওমনই। আর তখন খুব টেনশন করা শুরু করে দিই। আর অদ্ভুত ভাবে সেই সময়ই ফোনে কোনও নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না। ভেবেছিলাম বন্ধুবান্ধব কাউকে ফোন করে দেব অন্তত, সেটা পারছিলাম না। নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। ওয়াইফাই নেই। ল্যান্ডফোন থেকে রিসেপশনে পর্যন্ত ফোন করা যাচ্ছিল না। মারাত্মক ভয় লাগতে শুরু করে। কিন্তু কিছু তো করার নেই সেই সময়।

আমার পর দিন কল টাইম ছিল সকাল ছয়টায়। তো ঠাকুরের ওই ছবি আঁকড়ে ধরে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। ভোর হতেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। সেটে গিয়ে যখন জানাই এমন এমনটা ঘটেছে, তখন সে সব শুনে প্রোডাকশন ম্যানেজার যিনি ছিলেন তিনি, ইপি সকলে খুব রেগে গিয়েছিলেন। বলতে থাকেন 'কেন ওকে ভয় দেখানো হয়েছে', আমায় বলে রুম বদলে নিতে। দরকারে হোটেল বদলে দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তাঁরা। কিন্তু আমি তত ক্ষণে ঠিক করে নিয়েছি যে যদি কিছু থেকে থাকে আমি ওটার মুখোমুখি হবো। বন্ধুদের জানিয়েছি যে এমন এমন হয়েছে। ভিডিয়ো কলে আমার এক বন্ধু আমায় বলে যে, 'বাথরুমে দেখ কোথাও ফাঁকা আছে কিনা যেখান দিয়ে হাওয়া ঢুকে শব্দ হতে পারে।' তো সে সব দেখে, টেখে শুয়ে পড়েছি। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সেই রাতে আর কিছু টের পাইনি। একদম গভীর ঘুমিয়েছি। শুধু সে দিন নয়, তার পর যত দিন ছিলাম, মাঝে এক বার ফিরে আবার ৩-৪ দিনের জন্য যেতে হয়েছিল তখনও অদ্ভুত ভাবে ওই একই রুম পড়েছিল আমার, কিন্তু আর কখনও কিছু ফিল করিনি। বরং ঘরে যেন একটা পজিটিভ শক্তি ছিল।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement