রেকর্ডিংয়ে আশা ভোঁসলে।
চোখে চোখে কথা বল/মুখে কিছু বলো না...
তখন পুজোর প্যান্ডেলে এই গান বাঙালির প্রাণকে প্রেমের রোমাঞ্চে ভরিয়ে দিয়েছিল।
সময় বদলালেও তার নড়চড় হয়নি। আজও পুজো প্যান্ডেলে কখনও তাঁর ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে’ তো কখনও ‘যাবো কি যাবো না’— আশা ভোঁশলে আর রাহুল দেববর্মণের দারুণ সব চিরকালের গান।
‘‘দুর্গাপুজো মানেই ছিল আমার কাছে কলকাতার পুজোর গান। আমি আর পঞ্চম একের পর এক সুপারহিট গান দিয়েছি যা আজও শুনি পুজোর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বাজে।’’ মুম্বই থেকে বললেন আশা ভোঁশলে।
এ বার বহু দিন পরে আবার কলকাতার জন্য, দুর্গাপুজোর জন্য রেকর্ডিং করলেন শ্রদ্ধেয়া আশাজি।
‘‘পঞ্চম চলে যাওয়ার পর আর পুজোর গান করতে ভাল লাগত না। কিন্তু এ বার গাইলাম।’’ যেন দুর্গাপুজোকে ঘিরে তাঁর আর পঞ্চমের সোনালি দিনগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলেন এই সুর সম্রাজ্ঞী।
আশা ভোঁশলের গানকে সকল মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা বেশ কয়েক বছর ধরে যিনি করেন তিনি আশা অডিয়োর কর্ণধার মহুয়া লাহিড়ী। ‘‘আমি ভাগ্যবতী যে ওঁর মতো লেজেন্ডের সঙ্গ পেয়েছি। সময় কাটিয়েছি। ওঁকে এ বার একটা গান পাঠিয়েছিলাম। উনি সেটা শুনে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান। আমরা মুম্বই গিয়ে রেকর্ড করি’’, উত্তেজিত মহুয়া।
আরও পড়ুন: ‘রানি রাসমণি’ সেজে পুজোয় শো করব, নতুন জামা কখন পরব বলুন?
আরও পড়ুন: ‘পুজোতে অজস্র স্মৃতি,বেশির ভাগই জানানো ঠিক হবে না’
‘এ বার পুজোয় ফিরে এলাম’, অমলিন মধুর কণ্ঠে মুখরিত হবে আশার গান। সঙ্গীত পরিচালক রাজ আর শিলাদিত্যর গান শুনেই তিনি রেকর্ডিং করতে রাজি হন। শিলাদিত্য প্রায় পঁচিশ বছর ধরে নব্বই দশকের বলিউড গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে কাজ করে আসছেন। বললেন, ‘‘ওঁনার সঙ্গে কাজ করা যেন স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা। আমরা তো আর ডি বর্মণ, কিশোরকুমার, আশাজীর পুজোর গান শুনে বড় হয়েছি। এটা একটা ট্রিবিউট।’’
আশাজী যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও এ বার গানের সাউন্ডস্কেপে পুরনো দিনের মেজাজ ফিরিয়ে দিচ্ছেন তাঁর ভক্তদের। সে কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘ডিজিটাল যুগ। ইউটিউবে এখন গান রিলিজ হয়। এখন একটা গান করাই ভাল। তাই কলকাতার জন্য, দুর্গামায়ের জন্য, বাংলার জন্য এই গান। সাউন্ডস্কেপটা পুরনো, যাতে মানুষ পুরনো পুজোর গান মনে করতে পারবেন। আমরা কাজ করেছি। এ বার শ্রোতারা বলবেন।’’ স্বাভাবিক গলায় বললেন গায়িকা।
দুর্গাপুজো তাঁর কাছে আসলে কী?
‘‘দুর্গাঠাকুর আমার কাছে শক্তির প্রতীক। শক্তির আরাধনাই এই পুজোর মূল মন্ত্র। এখানে মহারাষ্ট্রে যেমন গণপতি ওখানে দুর্গা। আমি আর পঞ্চম কত বার কলকাতায় গেছি। ভাসান দেখে কী যে ভাল লাগত! ওখানে দুর্গোপুজোর জাঁকজমক আলাদা। কলকাতায় না থাকলে চেম্বুরের দুর্গাপুজো বা মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কের পুজো দেখতে যেতাম। এখন এত ভিড় বেরোতে পারি না। তবে এখানে নবরাত্রি উদযাপন আর কলকাতায় দেবী আরাধনা অনেকটাই এক, আসলে তো শক্তির আরাধনা...’’ আবেগ আশাজীর কণ্ঠে।
সারা জীবন দুর্গাপুজোয় গান গেয়ে বাঙালির জীবনের আবেশ, আবেগ, স্বপ্নে মাধুরী ভরে রেখেছেন তিনি।
এই গান শুধু গান নয়। তাঁর গানের পরিচয়কে এই পুজোর আলোয় যেন ভরিয়ে রাখা।