প্রতীকী চিত্র
আমার সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে এমন বলব না যে খুব ভয়ঙ্কর কিছু দেখেছি, বা কিছু। অনুভব করতে পেরেছি। একাধিক ঘটনা আছে, দাঁড়ান একটু ভেবে নিই যে কোনগুলি বলব।
প্রথম ঘটনাটা আমার নিজের পরিবারের একটি ঘটনা। আমার কাকিমা, উনি হাওড়ায় থাকতেন। তখন লকডাউন চলছে। আমরা, মানে আমি, মা, বাবা সবাই বাড়িতে। আমার মা বাথরুমে গিয়েছিলেন। তখন কটা বাজে? ওই ধরুন প্রায় রাত সাড়ে বারোটা। মা হঠাৎ দেখে মায়ের চারপাশে ছায়ার মতো কালো কিছু একটা, যেটার কোনও রূপ নেই, কোনও গঠন নেই। একটা কালো ছায়ার মতো কিছু বাথরুমে ঘুরছে। মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, বাথরুম থেকে বেরোতে পারছিলেন না। আমরা গিয়ে মাকে বাথরুম থেকে বের করি।
বাইরে এসে মা বসে, বলে ‘হয়তো আমার প্রেসার বেড়ে গেছে বা এমন কিছু’। কিছু সময় পর আমাদের কাছে একটা ফোন আসে হাওড়া থেকে। তখন কটা হবে, ওই একটা দেড়টা ধরুন। কাকু ফোন করে জানান যে কাকিমা মারা গেছেন। খবরটা শুনে আমরা খুব অবাক হয়ে যাই, কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমাদের বাড়ির পিছন দিকে একটা রাস্তা, মানে একটা গলি আছে যেটা দিয়ে কেবল কুকুর, বিড়ালরাই যায় আসে। ওখানে ওদের খেতে-টেতে দিই। মানুষ কেউ যাতায়াত করে না। ওই গলির দিকে আমাদের বাড়ির যে দরজা আছে, সে দিন রাতে দুমদুম করে দুটো ধাক্কা পাই। শব্দ পেয়ে যখন গিয়ে দরজা খুলি দেখি কেউ নেই।
দ্বিতীয় গল্পটা আমাদের পাড়ায় এক কাকু থাকতেন তাঁকে নিয়ে। এরম না যে সেই কাকুর সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল, বিশাল কথা বলতাম, বা মেলামেশা করতাম। ওই ৯ মাসে ৬ মাসে রাস্তাঘাটে দেখা হতো ওরম আর কী। তখন আমার বিয়ে হয়নি, আমি আর প্রিয়াঙ্কা গিয়েছিলাম বোধহয় কিছু কেনাকাটা করতে। সেখান থেকে ফিরছি, প্রচণ্ড বৃষ্টি নেমেছে। পাটুলির ব্রিজ থেকে নেমে আমরা গড়িয়ার দিকে এগোচ্ছি, তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ক্রসিংয়ের কাছে ছিলাম। তখন হঠাৎ দেখি ওই কাকু স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তখন প্রিয়াঙ্কাকে বলে উঠি, ‘ওটা কাকু না?’ এ বার ও তো ওঁকে চেনে না। জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’ তার পর ওকে জবাব দিতে গিয়েই হঠাৎ খেয়াল হল যে তিন বছরের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে যে উনি মারা গিয়েছেন। আমি সেই সময় ওঁকে দেখেছিলাম, স্কুটি নিয়ে রাস্তা পার করছেন। প্রিয়াঙ্কা কিন্তু দেখতে পায়নি। তো আমি ভাবলাম হয়তো আমারই ভুল, ভাবিনি আর কিছু এটা নিয়ে।
পর দিন ঘুম থেকে উঠে যখন এক তলায় গিয়েছি, মা কোথাও থেকে তখন ফিরছে। আমি জিজ্ঞেস করি যখন যে ‘কোথায় গিয়েছিলে’, মা বলে, ‘ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, কাকুর তো কাল মৃত্যু দিন ছিল…’। সেই সময় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল যে আমি তা হলে কাকুকে সে দিন দেখেছি যে দিন ওঁর মৃত্যু দিন ছিল। এমন না যে কাকু আমার খুব কাছের, বা অবচেতন মনেও আমার ওঁর কথা মনে পড়ে বা কিছু। ওঁর সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই দূরের, তাও দেখেছিলাম।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।