Gourab Chatterjee

Kali Puja 2021: উত্তমকুমার আলোর উৎসবে যোগ না দিলেও গৌরীদেবী কালীপুজোয় ছাদ থেকে কালীপটকা ছুড়তেন

বাবা গৌতম চট্টোপাধ্যায় নিজে তুবড়ি বানাতেন, সেই তুবড়ির আলো চার তলা বাড়ি অবধি পৌঁছে যেত

Advertisement

গৌরব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ ১২:১৩
Share:

দাদুর পুজো নিয়ে অনেক গল্পকথা শুনেছেন গৌরব

লক্ষ্মীপুজো বলতেই এখন বাঙালির কাছে উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায় মানে আমার দাদুর লক্ষ্মীপুজো।কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় এখনও ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। দাদুর পুজো নিয়ে অনেক গল্পকথাও শুনেছি। যেমন, দাদুর নাকি দেবীদর্শন হয়েছিল। তার পরেই তিনি এই পুজো আরম্ভ করেন। পত্র-পত্রিকায় পড়েছি, অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের বাড়ির পুজো দেখে দাদুর শখ হয়েছিল তিনিও ধুমধাম করে লক্ষ্মীপুজো করবেন। তার থেকেই আমাদের বাড়িতে এই পুজোর চল। যা আমরা এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করি। তবে কালীপুজোর দিন আমাদের বাড়িতে কোনও পুজোই হয় না।

লক্ষ্মীপুজোর পরেই দীপাবলি। স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে জানতে চান, যিনি এত ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো করতেন তাঁর দীপাবলি কেমন ছিল? নিশ্চয়ই সবাইকে নিয়ে হইহই করতে করতে বাজি পোড়াতেন মহানায়ক? শুনেছি, আলোর উৎসব নিয়ে দাদু নাকি তেমন উৎসাহী ছিলেন না। নিজে বাজি পোড়াতেন এমনটাও শুনিনি। সেই ফাঁক নাকি পূরণ করে দিতেন আমাদের ঠাম্মা, গৌরীদেবী। দাদু যতটাই নিস্পৃহ ঠাম্মার ততটাই উৎসাহ ছিল বাজি ঘিরে। বাড়িতে বানানো হত তুবড়ি। আসত কালীপটকা। ঠাম্মা নিজে সে সব পোড়াতেন, ফাটাতেন। শুনেছি, তাঁর তুবড়ির আলো নাকি অনেক দূর পর্যন্ত উঠত। আর বাড়ির ছাদ থেকে তিনি কালীপটকা জ্বালিয়ে ছুড়তেন। মাটি ছোঁয়ার পরেও সেই পটকা প্রায় বোমার মতো শব্দ করে সমানে ফেটেই যেত। অনেকটা দোদোমার মতো।

ঠাম্মার সেই শখ পুরো মাত্রায় ছিল আমার বাবা গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। বাবা নিজে তুবড়ির খোল কিনে আনতেন। তার মশলাও মাখতেন নিজে হাতে। তার পর মাটির খোলে ভরে তুবড়ি বানিয়ে তাকে নিয়মিত রোদে দিতেন। আলোর উৎসবের দিনে বাবার আমলে যেন আতসবাজির অলিখিত প্রতিযোগিতায় নামত চট্টোপাধ্যায় বাড়ি। কোনও তুবড়ি থেকে সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়বে সোনালি ফুল? কোনওটা থেকে রুপোলি ফুল দেখা দিত। আবার কোনওটায় সোনালি-রুপোলি ফুলের ছড়াছড়ি। সব বাবার হাতের কেরামতি। মনে আছে, সেই সব তুবড়ির আলো উঠত চার তলা পর্যন্ত। তবে ঠাম্মার মতো শব্দবাজি বাবা তেমন ফাটাতেন না।

Advertisement

বাবা চলে যাওয়ার পরে আতসবাজির আলোয় একটু হলেও টান ধরেছে। আমি বাজি পোড়াতে খুব একটা ভালবাসি না। আবার বাজি যে একেবারে পোড়াই না, তাও নয়। বাবার মতোই আলোর বাজিতে আমার যত আগ্রহ। তাই তারাবাজি, রংমশাল, তুবড়ি প্রিয়। রকেট উড়ে আকাশে যখন আলোর মালা হয়ে জ্বলতে থাকে, আমি এখনও মোহিত হয়ে দেখি। শেল ফেটে যখন অমানিশার আকাশে আলোর হাজার ফুল ফোটে, আমি চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাই।

কিন্তু শব্দবাজির ধারপাশেও যাই না। কেন জানেন? আমার প্রিয় পোষ্যকে পুজোর তিনটে দিন খুব কষ্ট পেতে দেখেছি। বেচারি কিছুই তো বলতে পারত না। বাইরে বিকট শব্দে শব্দবাজি ফাটত। ও ঘরে ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপত। ওকে দেখেই আমি শব্দবাজি ফাটানো ছেড়ে দিয়েছি।

এ বছর হাইকোর্টের নির্দেশে আতসবাজি অতীত। আমি খুবই স্বস্তি পেয়েছি। পরিবেশ দূষণ অনেকটাই কমবে। বিশ্ব অতিমারির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে। আর উৎসব? প্রাণে বাঁচলে তবে না উদযাপন! ভেবে খুব ভাল লাগছে, অবশেষে শুধুই নানা ধরনের আলো, মোমবাতি, প্রদীপে সেজে উঠতে চলেছে আলোর উৎসব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন