বাঙালি বাড়িতে রবিবারের দুপুর মানেই পাঁঠার মাংসের ঝোল আর সরু চালের ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাত! কিন্তু, আজ থেকে বহু বছর আগে বিষয়টা কিন্তু এমন ছিল না। সেই সময়ে যখন-তখন মাংস খাওয়া যেত না।
বাঙালি বাড়িতে রবিবারের দুপুর মানেই পাঁঠার মাংসের ঝোল আর সরু চালের ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাত! কিন্তু, আজ থেকে বহু বছর আগে বিষয়টা কিন্তু এমন ছিল না। সেই সময়ে যখন-তখন মাংস খাওয়া যেত না।
কিন্তু, পরবর্তীতে ভোজনরসিক বাঙালিদের মধ্যে মাংসের চাহিদা বাড়তে থাকে। তবে, তাতে দু'টি প্রধান সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত, প্রত্যেকের প্রয়োজন মতো মাংস জোগাড় করা।
আর দ্বিতীয়ত, ঘন ঘন বলি দেওয়ার জন্য লোকবলেরও অভাব ছিল। এ ছাড়াও, ঘন ঘন বলি দেওয়ার জন্য আর্থিক অনটনও দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন উপায় বার করা হল।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাতারাতি অনেক মাংসের দোকান গড়ে ওঠে। এই দোকানগুলি সাধারণত বিভিন্ন কালীমন্দির লাগোয়া ছিল। মাংস বিক্রি শুরু হয় এক নতুন কৌশলে।
দোকানিরা কালী মূর্তিকে সাক্ষী রেখে মাংস বিক্রি শুরু করেন। এর মাধ্যমে মাংসকে 'প্রসাদী মাংস' হিসাবে বিক্রি করা হত। এই মাংস দেবতার কাছে উৎসর্গ করা মাংসের মর্যাদা পেত।
কখনও কখনও মাংসের দোকানের ভিতরেই কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হত। সেখানেই দেবীর পুজো হতো নিয়মিত। এই দেবীকে কসাইরা তাঁদের রক্ষাকর্ত্রী মনে করতেন।
এই কালী তখন থেকে 'কসাই কালী' নামে পরিচিত হন। অথবা তাঁকে 'কসাইদের কালী' বলেও ডাকা হতো। মূলত, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা মেনেই এই ব্যবস্থার জন্ম।
অর্থাৎ, দেবীকে উৎসর্গ করে 'বৈধ ভাবে' মাংস বিক্রির পথ তৈরি হল। এ ভাবেই কলকাতার পুরনো পাঁঠার মাংসের দোকানগুলির জন্ম হয়। মাংস বেচতে দেবী কালীই দোকানিদের ভরসা হলেন!
আজও কলকাতার বৌবাজার বা চিৎপুর অঞ্চলে এই কসাই কালীর দেখা মেলে। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানগুলি বাঙালির মাটন-প্রেমের এক বিশেষ ইতিহাস বহন করে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।