Bengali Food Connection With Devi Durga

মণ্ডা থেকে দই, এমনকি মাশরুমকেও দুর্গার নাম দিয়েছে বাঙালি

বাঙালি মানেই খাদ্যরসিক হিসেবে পরিচিত। খাবারের সঙ্গে তারা জড়িয়ে ফেলেছে নিজেদের আরাধ্যা দেবী দুর্গার নামও।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ১৬:২৩
Share:

প্রতীকী চিত্র

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাকি? পুজোর চারটে দিনের জন্য বঙ্গসন্তানেরা ৩৬১ দিন ধরে অধীর অপেক্ষায় থাকেন। খাদ্যরসিক হিসেবে বাঙালির সুনাম চিরন্তন। প্রিয় উৎসবকেও তারা যে খাবারের সঙ্গে জুড়ে দেবে, তাতে আর সন্দেহ কী!

দেবী দুর্গার নাম তাই দিব্যি জুড়ে গিয়েছে খাবারে। এ ঘটনা হালের বা নিতান্ত শহুরে নয় কিন্তু। এর নজির রয়েছে উনিশ শতকে।

শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টি মণ্ডা। দেব নৈবেদ্যর দুনিয়ায় ‘হার্টথ্রব’ ছিল এই মণ্ডা। উনিশ শতকে বাড়ির দুর্গাপুজো থেকে বারোয়ারি পুজো– সবেতেই মূল নৈবেদ্য ছিল এক বিশেষ ধরনের মণ্ডা। যা আগা তোলা মণ্ডা বা ‘দুর্গা মণ্ডা’ নামে পরিচিত ছিল।

এর উপরের অংশ চূড়ার মতো করা হত। তাই নাম আগা তোলা মণ্ডা। নৈবেদ্যের থালায় চালের পাহাড়ের উপরে আগমণ্ডা বসানো হত।

হুতোম অর্থাৎ কালী সিংহী লিখে গিয়েছেন, ‘পঞ্চমী থেকেই ময়রারা ‘দুর্গোমোণ্ডা’ ও আগাতোলা সন্দেশের ওজন দিতেন।’

দেবী দুর্গাকে নিবেদন করা হত বলেই দুর্গা মণ্ডা নামের সৃষ্টি। বারোয়ারি পুজোর বর্ণনায় হুতোম লিখেছেন, ‘মূল নৈবিদ্যির আগা তোলা মোণ্ডাটি ওজনে দেড় মন।’ বোঝাই যায়, এই আগা তোলা বা দুর্গা মণ্ডাটি হত পেল্লায় সাইজের।

জলপাইগুড়ির কামারপাড়ার নিয়োগী বাড়ির দুশো বছরেরও বেশি প্রাচীন পুজোয় ‘দুর্গা দই’-এর চল রয়েছে।

আদপে এটি ঘোল জাতীয় পানীয়। দুর্গাপুজোর সময়ে বানানো হয় বলে নাম দুর্গা দই। নবমীর দিন দেবীকে দই নিবেদন করা হয়। তার পরে তা বাড়ির সদস্যরা খান। মিষ্টি দইয়ে জল ঢেলে পাতলা করে ঘোলের মতো পানীয় বানানো হয়। গন্ধরাজ লেবুর পাতা দেওয়া হয় স্বাদ বাড়ানোর জন্য।

‘পুজো আসছে আসছে’, এমন সময়ে রাঢ়বঙ্গ তথা জঙ্গলমহলের বাজারে দেখা মেলে এক বিশেষ ধরনের মাশরুমের, যা ‘দুগ্গা ছাতু’ বা ‘পরব ছাতু’ নামে পরিচিত।

এই 'দুগ্গা ছাতু'র রং মূলত সাদা, আকৃতিতে ছোট। বর্ষার শেষে দেবী দুর্গার আগমনের প্রাক্কালে বনে-জঙ্গলে এই মাশরুম গজায় বলে একে ‘দুগ্গা ছাতু’ বলা হয়। মাশরুমকে আম বাঙালি ব্যাঙের ছাতা বলেই ডেকে এসেছে। সেই ছাতা থেকে ছাতু নামের উদ্ভব। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই মাশরুম পাওয়া যায়। টানা দু-তিনদিন বৃষ্টির পরে রোদ উঠলেই শাল-পিয়ালের জঙ্গলে এই ছাতুর দেখা মেলে। জল-বর্ষায় ফলন কম হয়। খাবার যখন বাড়ন্ত, তখন ভরসা প্রকৃতি।

খাবারে দুর্গার নাম এসে পড়েছে পুজোকে ঘিরেই। কখনও পুজোর আচার, নৈবেদ্যের সঙ্গে জড়িয়ে দুর্গার নাম পেয়েছে দই, মণ্ডা আবার পুজোর মরশুমে জন্মে দুর্গার নাম জুটেছে মাশরুমের ভাগ্যে। এর মধ্যে মিশে আছে সারল্য, যেন শিকড়ের টান!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement