দুর্গাপুজোর সময়টা বেশির ভাগ বাঙালির কাছেই খুব আবেগের। শারদীয়া শুধু আনন্দ, উৎসব আর ভালবাসার নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে বহু প্রাচীন লৌকিক বিশ্বাস এবং প্রথা। এই বিশ্বাসগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। অনেকেই মনে করেন, এই সময়ে কিছু কাজ করা উচিত নয়, কারণ এতে অশুভ ফল হতে পারে। তেমন কিছু প্রচলিত লৌকিক বিশ্বাসের হদিস রইল এখানে।
১. মাকড়সা তাড়াবেন না অনেকের মতে, দুর্গাপুজোর সময়ে বাড়িতে মাকড়সা তাড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। মাকড়সাকে অনেকে দেবী লক্ষ্মীর আগমন বার্তাবাহক হিসেবে মনে করেন। বিশ্বাস করা হয়, যদি বাড়িতে মাকড়সা জাল তৈরি করে, তবে তা ধন-সম্পদের আগমনকে ইঙ্গিত করে। তাই এই সময়ে মাকড়সার জাল পরিষ্কার করতে নিষেধ করা হয়।
২. অতিথিকে ফেরাবেন না দুর্গাপুজোর সময়ে যে কোনও অতিথিকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বাড়িতে আমন্ত্রণ করা হয়। একটি প্রচলিত বিশ্বাস হল, এই সময়ে কোনও অতিথিকে খালি হাতে বা খাবার না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
মনে করা হয়, দুর্গাপুজোর সময়ে অতিথির রূপ ধরে স্বয়ং দেবী বা দেবতারা বাড়িতে আসেন। তাই অতিথিকে ফিরিয়ে দিলে দেবীর আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৩. নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকুন পুজোর সময়ে নখ এবং চুল কাটা সাধারণত শুভ বলে মনে করা হয় না। এই বিশ্বাসটি মূলত ধর্মীয় আচার এবং পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, পুজোর দিনগুলিতে নিজেকে যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ এবং পবিত্র রাখতে হয়। তাই অনেকে এই সময়ে নখ এবং চুল কাটার মতো কাজগুলি এড়িয়ে চলেন।
৪. আমিষ আহার ত্যাগ অনেক পরিবারে পুজোর সময়ে সম্পূর্ণ নিরামিষ আহারের প্রথা রয়েছে। এই বিশ্বাসটি মূলত দেবী দুর্গার প্রতি ভক্তি এবং সম্মানের প্রকাশ। অবাঙালিদের মধ্যেও নবরাত্রির সময়ে অনেকেই নয় দিন নিরামিষ খাবার খান।
৫. নতুন পোশাক পরা পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল নতুন পোশাক। এমন প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, পুজোর প্রতিটি দিন নতুন পোশাক পরা উচিত। এটি নতুনত্বের প্রতীক এবং উৎসবের আনন্দকে বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।
এই লৌকিক বিশ্বাসগুলি কোনও ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং সামাজিক মানসিকতার অংশ। এগুলি বহু শতাব্দী ধরে মানুষের মনে গেঁথে আছে এবং এই বিশ্বাসগুলি পুজোর আনন্দকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। এগুলি মানা বা না-মানা একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয়। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।