প্রতীকী চিত্র।
শহর জুড়ে এখন কালীপুজোর বিসর্জনের পালা চলছে, এক এক করে নিভছে অলিগলির সমস্ত আলো। হেমন্তের মিঠে রোদে বাঙালি যখন আগামী উৎসবের দিন গুনছে, ঠিক তখনই আরেক ভালবাসার পরব এসে কড়া নাড়ছে দুয়ারে। এ হল ছটপুজো। মূলত অবাঙালিদের উৎসব হলেও, সুখ আর শান্তির কামনায় এখন এ শহরের ঘরে ঘরে চলে ছটের ডালা সাজানোর প্রস্তুতি। শুধু সাজানো নয়, ছট পরব আদতে প্রকৃতির কাছে, সূর্য দেবতার কাছে এক নীরব অঙ্গীকার, এক কঠিন কৃতজ্ঞতা স্বীকার। তাই তো এই পুণ্য অর্জন করতে দরকার নিখুঁত নিয়ম পালন।
একে ‘ছটী’, ‘ডালা ছট’, ‘সূর্য ষষ্ঠী’—সহ নানা নামে ডাকা হয়। দুর্গাপুজোর মতোই চার দিনের এই উৎসবের প্রতিটি ধাপই গভীর নিষ্ঠার দাবি রাখে। শুরুটা হয় 'নহায় খায়' দিয়ে। প্রথম দিনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, মহিলারা রান্না করেন লাউ ভাত। শুনে মনে হচ্ছে লাউ-এর তরকারি? হ্যাঁ, ভাতের সঙ্গে লাউয়ের তরকারি, সঙ্গে চানা ডাল আর নানা নিরামিষ সবজি। তবে এই রান্নার একটি প্রধান শর্ত— নুন নৈব নৈব চ। যিনি ব্রত পালন করছেন তিনি এবং পরিবারের বাকি সদস্যরাও দুপুরে ওই লাউ ভাত খান। রাতের খাবার অবশ্য হতে পারে যে কোনও নিরামিষ পদ।
দ্বিতীয় দিনটি, অর্থাৎ 'খরনা', আরও কঠিন। সূর্য দেবতার পুজো হবে এ দিন। যিনি ব্রত রাখবেন, তাঁকে সারা দিন থাকতে হবে উপবাসে। দিনভর উপবাসের পর সন্ধ্যায় প্রসাদ হিসাবে ক্ষীর, রুটি, কলা দেওয়া হয়। এই সন্ধ্যার পর থেকেই আসল কঠিন ব্রতের শুরু। শুরু হয় ছট পুজোর প্রধান উপকরণ, মুচমুচে 'ঠেকুয়া' বানানোর কাজ।
তৃতীয় দিনে, সন্ধ্যায় জলাশয়ে নেমে ব্রতপালনকারীরা ডুবন্ত সূর্যকে অর্ঘ্য দেন। ফল-মিষ্টি-ঠেকুয়ায় সাজানো হয় ডালা। অর্ঘ্য শেষ হলে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে। আর এই রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় নির্জলা উপবাস। জলের এক ফোঁটাও স্পর্শ করা যাবে না!
উৎসবে শেষ দিনে, অর্থাৎ চতুর্থ দিনে, সূর্য ওঠার আগেই ভক্তরা আবার যান জলাশয়ে। এ বার উদয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়ার পালা। পুজো শেষ হলে, বাড়ি ফিরে সেই খরনার সন্ধে থেকে শুরু হওয়া ব্রত ভাঙা হয়। আদা, জল, গুড় আর অবশ্যই ঠেকুয়া খেয়ে সম্পন্ন হয় কঠিন ব্রত। এই নিয়ম নিষ্ঠা দিয়ে মানতে পারলেই নাকি সংসার ভরে ওঠে সুখ-সমৃদ্ধিতে।
ছটপুজো মানে কৃতজ্ঞতার উৎসব। যাঁরা পরিবারে শান্তি, সন্তান সুখ, আর জীবনে স্থিতি চান, তাঁদের কাছে এই পুজো এক পরম বিশ্বাস।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।