Bhaiphonta Rituals

কারও প্রতিপদে ফোঁটা, কারও দ্বিতীয়ায়, কেন এই ফারাক জানেন?

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৩০
Share:
০১ ১৩

কালীপুজোর পর দিন সন্ধেবেলা বিসর্জনের ঢাক যখন বেজে ওঠে, দেবীকে বিদায় জানাতে যখন সকলে ব্যস্ত তখন শুরু এক নতুন উৎসবের তোড়জোড়। অনেক বাড়িতেই তখন ভাইফোঁটার আবহ।

০২ ১৩

সাধারণত প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে পালিত হয় ভাইফোঁটা। তাই একে অনেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়াও বলেন। আবার কিছু জায়গায় প্রতিপদের দিনই ভাইফোঁটা পালিত হয়। পূর্ববঙ্গীয় রেওয়াজে ভাইফোঁটা দেওয়া হয় প্রতিপদে।

Advertisement
০৩ ১৩

বোনেরা ভাইদের ফোঁটা দিয়ে বলে, ‘প্রতিপদে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে ভাই আমার যম দুয়ারে তিতা।’

০৪ ১৩

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা’-চেনা ছড়াটি প্রতিপদের ভাইফোঁটায় যায় বদলে। ফোঁটার উপকরণ দই, চুয়া, চন্দনের ফারাক দেখা যায়।

০৫ ১৩

বোনের বিয়ে হয়ে গেলে প্রতিপদে ফোঁটা দেওয়া হয়।

০৬ ১৩

পূর্ববঙ্গ নদী প্রধান। মেঘলা আকাশ, যখন তখন বৃষ্টি উৎসবেও প্রভাব ফেলত। তখন মোটর গাড়ির হাঁকডাক দূরস্থ। জলের দেশে জলে-জলে চলা। বাড়িতে বাঁধা জলের যান। দূর দেশে বোনের বাড়ি, দূর দেশে দাদাটি থাকেন, কিংবা কন্যার শ্বশুরবাড়ি-বাপেরবাড়ির পথটি- সুদূর, তাই এক দিন হাতে রাখার ব্যবস্থা। 'প্রতিপদে ফোঁটা' আর 'দ্বিতীয়াতে নীতা' অর্থাৎ 'নিমন্ত্রণ'। বাপের ভিটে মেয়ের আসার পথটি সহজ নয়, নিজের সংসারের ভার সামলে তবেই সে দেখে যেতে পারে বাপ-মা-ভাই স্বজনদের। আকাশ ভাঙা বৃষ্টি, উতলা নদী যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় ঘরের মেয়ে ঘরে ফেরার পথে- এ যেন অনেকটা তারই ব্যবস্থা। কিংবা ভাই-দাদাটিকে আর একটু বেশি ধরে রাখা।

০৭ ১৩

দ্বিতীয়ার আগের দিন ভাইদের ফোঁটা দিয়ে লোকাচারের সেরে রাখা হয়। পর দিন হয় ভুরি ভোজের আয়োজন।

০৮ ১৩

পূর্ববাংলার কোনও কোনও অঞ্চলে ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে গান গাওয়ার প্রচলন ছিল। গানগুলোর মাধ্যমে ভাই-বোনের সম্পর্ক ফুটে উঠত। গানটি- আশ্বিন যায় কাতিক আইয়ে গো। দ্বিতীয়ার চান্দে দিল দেখা ॥ ভাই-দ্বিতীয়ার দিলাম ফোঁটা। ওরে ওরে করুয়াল, তুই সহরে যাইতে। ভাই-ফোঁটা কথা শুনতাম গোবর আন্যা দিতে॥

০৯ ১৩

গানটির আরেক রূপভেদ পাওয়া যায়।- আশ্বিন যায় কাতিক আইতে গো। ভাইধনেরে দুতিয়া দিব রঙ্গে॥ পাড়ারি ডাকাইয়া ভইনে রঙ্গী গুয়া পাড়িল গো। ভাইধনের দুতিয়া দিব রঙ্গে।

১০ ১৩

বঙ্গদেশে ভাইফোঁটার সূত্রপাত ঠিক কবে হয়েছিল তার আন্দাজ মেলে সর্বানন্দ সুন্দরী নামের এক তালপাতার পুঁথিতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭ অব্দে বঙ্গে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া প্রথার শুরু।

১১ ১৩

এই প্রথার নেপথ্যে একাধিক পুরাণ কাহিনিও প্রচলিত।

১২ ১৩

আবার মহাবীর জৈন্যের যোগ মেলে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে মহাবীর জৈনের প্রয়াণে রাজা নন্দিত বর্ধনের শোকবিহ্বল ভগিনীকে সান্ত্বনা দিতে অন্নগ্রহণ করানো হয়। সেই থেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার প্রথা চালু হয়।

১৩ ১৩

সময়ের বদল যতই হোক, যতই বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠুক ডিজিটাল ভাইফোঁটা, কিন্তু এক রয়ে গিয়েছে ভাই-বোনের অপেক্ষার চেনা টান। রোজ রোজ ভিডিয়ো কলে দেখা হলেও প্রবাসী ভাই তাই দিন গোনে ঘরে ফেরার, আর দিদিটিও পথ চেয়ে বসে থাকে। জমিয়ে রাখে আদর। দোকান কিংবা সাইট ঘুরে কেনে পছন্দের মিষ্টি, দুপুরের আয়োজনে কোমর বেঁধে রাঁধে ভাইয়ের প্ৰিয় পদ। উপহার আর ভালবাসার ছোট ছোট আবেগে ধরা দেয় এক চেনা আটপৌরে গল্প। সময়ের শত বদলেও যে গল্পের কাহিনি একই থেকে যায় চিরকাল... (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement