Bonedi Barir Pujo

প্রতিপদেই শুরু হয় দুর্গাপুজো, জানেন কোথায়?

নবাবগঞ্জের মণ্ডল বাড়িতে প্রতিপদ থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই পুজো ২১৭ বছরে পড়ল এ বার।

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০০
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

আজ প্রতিপদ। দেবীপক্ষের প্রথম দিন। দেবী-বোধন অর্থাৎ দুর্গাপুজো শুরুর সাতটি কল্পের মধ্যে অন্যতম হল প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ। মহালয়ার পরদিন প্রতিপদে পুজো শুরু হয়। প্রতিপদ থেকে নবমী অবধি পুজো চলে, দশমীতে বিসর্জন। ইছাপুরে নবাবগঞ্জের মণ্ডল বাড়িতে প্রতিপদ থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই পুজো ২১৭ বছরে পড়ল এ বার।

Advertisement

সংগৃহীত চিত্র।

মণ্ডল বাড়িতে দেবী দুর্গা পূজিতা হন কন্যা রূপে। শিব বাড়ির জামাই। জামাই আপ্যায়নের মতো তাঁর পুজো হয়। দেবী এখানে অসুরদলনী নন। মহিষাসুর থাকে না। দশভুজার বদলে মণ্ডল বাড়ির দুর্গা দ্বিভুজা। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী এবং শিবকে নিয়ে দেবী যেন বাপের বাড়ি আসেন। সপরিবারে তাঁর পুজো হয়। শিব ক্রোড়ে ষণ্ডের পৃষ্ঠে আরোহণ করেন তিনি। দুর্গার এই রূপ বাংলায় হরগৌরী দুর্গা নামে পরিচিত। আজও পূর্বপুরুষদের রীতি মেনে বাড়ির ঠাকুর দালানে প্রতিমা গড়া হয়।

সংগৃহীত চিত্র।

মণ্ডল পরিবারের পূর্বপুরুষ রসময় মণ্ডলের আমল থেকে বা তারও আগে থেকে তাঁরা ধান্য লক্ষ্মীর পুজো করছেন। চাল, ডালের ব্যবসা এবং অন্য ব্যবসা-বাণিজ্য থাকায় মণ্ডল পরিবার সুদীর্ঘকাল থেকে লক্ষ্মীর আরাধনা করে চলেছে। তার পর দুর্গাপুজো শুরু। প্রথম বারো-তেরো বছর ঘটে দুর্গা আরাধনা করতেন তাঁরা। তখন মাটির বাড়িতে দুর্গা ঘটে পুজো হতো। ধীরে ধীরে মূর্তি পুজোর প্রচলন ঘটে। রসময় মণ্ডলের পুত্র শ্রীধর মণ্ডল ও বংশীধর মণ্ডলের আমলে দুর্গাপুজোর জাঁকজমক বাড়ে। মণ্ডল বাড়ির পুজো জনপ্রিয়তা পায়।

Advertisement

সংগৃহীত চিত্র।

মণ্ডল পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কৃষ্ণ ভক্ত। তাঁদের বাড়ির দোতলায় নারায়ণের ঘর রয়েছে। নারায়ণের নিত্য সেবা হয়। তাই এ বাড়িতে বৈষ্ণব মতে দেবী দুর্গার পুজো হয়। কৃষ্ণ ভক্তরা শক্তির আরাধনা করবেন, কী ভাবে হবে পুজো? সেকালে প্রশ্ন উঠেছিল। পণ্ডিতেরা তখন বৈষ্ণব মতে পুজো করার বিধান দেন। সেই কারণে মণ্ডল বাড়ির পুজোয় কোনও রকম বলিদান হয় না। ঠাকুরের ভোগে তুলসী পাতা দেওয়া হয়। প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো। মহালয়ার পর দিন বাড়িতে ঘটের ঘরে দুর্গা ঘট স্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডল বাড়িতে পুজো আরম্ভ হয়। এই সময় নারায়ণ দোতলা থেকে একতলায় ঘটের ঘরে অবস্থান করেন। প্রতিপদ থেকে চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়। বাড়িতে পুজোর দিনগুলোয় আমিষ ঢোকে না। ঠাকুরের গায়ে রঙের প্রলেপ পড়ার পর থেকে মণ্ডল বাড়িতে মুসুর ডাল রাঁধাও বন্ধ হয়ে যায়। ষষ্ঠীতে বোধন, সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান, ১০৮ প্রদীপ জ্বেলে সন্ধিপুজো, নবমী পুজো... সব প্রথা মাফিক চলে। সপ্তমীতে আজও ধান্য লক্ষ্মী স্থাপন করা হয়। মণ্ডল বাড়িতে অন্নভোগের রেওয়াজ নেই। দেবীকে লুচি, নানাবিধ ভাজা, দই-মিষ্টি নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন ঠাকুরমশাই ঘটের সুতো কেটে দেওয়ার পর বাড়িতে আমিষ রান্না হয়।

সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

দশ দিনের পুজো, আবাহন শেষে বাড়ির বৌ-মেয়েরা দেবীকে বিদায় বেলায় বরণ করেন। মণ্ডল বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। তাঁদের পরিবারিক ঘাট মণ্ডল ঘাটে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। সেখান থেকে নৌকোয় চাপিয়ে দেবীকে নৌকোবিহার করানো হয়। তার পর নিরঞ্জন। ২০১০ সাল অবধি জোড়া নৌকোয় বিসর্জন পর্ব চলত। দুটো নৌকোর মাঝে কাঠের পাটাতনের উপর দেবী প্রতিমা বসানো হতো। এখন সে প্রথা বন্ধ। এখন একটা নৌকোয় করে দেবীর নিরঞ্জন পর্ব সম্পন্ন করা হয়। দশমীর পর ধান্য লক্ষ্মী ও নারায়ণ পুনরায় নিজেদের ঘরে ফিরে যান।

তথ্যঋণ: সৌমিক মণ্ডল

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement