প্রতীকী চিত্র
একাধিক বনেদি বাড়িতে দেবী দুর্গার বাহন সিংহের বদলে ঘোড়া। কোথাও আবার তার মুখ ঘোড়ার মতো হলেও শরীর সিংহের মতোই। কিন্তু কেন এমনটা হয়? ইতিহাসের পাতা থেকে সে রহস্য ফাঁস করলেন আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক গৌতম বসুমল্লিক?
আনন্দবাজার ডট কমকে গৌতম বলেন, ''বাঙালিরা যে দুর্গাপুজো করে, সে ভাবে বাঙালি ছাড়া কেউ করে না। এই দুর্গা এমন এক দেবী, যিনি অসুরকে বধ করছেন এবং তাঁর বাহন হল সিংহ। ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্গার যত মূর্তি পাওয়া গিয়েছে, প্রথম দিকে কিন্তু তার এমন চেহারা ছিল না। এই মূর্তির চালচিত্রে কোথাও সিংহ নেই। সেখানে একটি মহিষকে বধ করছেন এক নারী। ধরা হয় সিংহটা বাইরের।''
তা হলে সিংহ কবে, কী ভাবে দেবীর বাহন হয়ে উঠল? গবেষকের ব্যাখ্যা, ''সপ্তম শতকের আগে সিংহবাহিনী কোনও দুর্গামূর্তি পাওয়া যায়নি। এমনকী সেখানে কখনও দেবীর চার হাত, কখনও বারো হাত, কখনও দশ হাত, ইত্যাদি দেখা গিয়েছে। ২২ হাত পর্যন্ত মূর্তিও পাওয়া যায়। একমাত্র ১৮ হাতের মূর্তি কখনও দেখা যায়নি। যদিও দশের বেশি হাত থাকলে তাতে অস্ত্র কী কী ছিল, সেটা সব সময়ে স্পষ্ট বোঝা যায় না।''
তিনি এ দিন এও জানান, “আমাদের এখানে তখন যেহেতু সিংহ বিশেষ ছিল না, কাজেই সিংহকে কেমন দেখতে শিল্পীরা সেটা জানতেন না। তাঁদের চেনা জিনিস হচ্ছে ঘোড়া। এ দিকে চণ্ডীর বর্ণনায় রয়েছে সিংহ একটা চারপেয়ে প্রাণী, তার মাথায় কেশর আছে। এ বার কেশর ঘোড়া, সিংহ দুই প্রাণীরই আছে। কেশরের যে বিন্যাস সেটা সিংহের কেমন সেটা তো তাঁরা জানতেন না, সেই জন্য তাঁরা সেই প্রাণীর মধ্যে ভয়ংকর কিছু একটা আনতেই ওই অনেকটা ড্রাগনের মতো চেহারা দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ড্রাগন কেন আমাদের পরিচিত ছিল? কারণ আমাদের এখানে তো দীর্ঘ দিন বৌদ্ধ শাসন ছিল, চিনা পর্যটকরাও এসেছেন অনেকে। ফলে তাঁদের সঙ্গে ড্রাগনের সেই ছবিগুলিও আসত, সেটা থেকেই তাঁদের একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল ড্রাগনের বিষয়ে, আর সিংহকে ভয়াবহ বানাতে তাঁরা ওরম একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই কারণে পুরোনো পুজো গুলির মধ্যে এই রকম ঘোড়ার মতো সিংহ দেখা যায়। ঘোড়া যেহেতু যুদ্ধ, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হতো তাই সেটা পরিচিত প্রাণী ছিল।”
কিছু ক্ষেত্রে একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এক সময়ে যাতায়াত থেকে যুদ্ধ, সবেতেই ঘোড়ার ব্যবহার ছিল এবং তা মূলত সমাজের উঁচুশ্রেণির মানুষরাই ব্যবহার করতেন। দুর্গাপুজোও ধনী ব্যক্তিদের বাড়িতেই হতো। সে কারণে দেবীর বাহন ঘোড়ার আকারেই গড়া হতো।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।