Origin of the Visarjan Dhak Beat

‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’-- কী ভাবে জন্ম হল বিসর্জনের ঢাকের বোলের?

দশমী মানেই উমার ঘরে ফেরার পালা। ঢাকের তালে মন বলে ওঠে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন।’ কিন্তু কেমন করে সৃষ্টি হয়েছিল বিসর্জনের ঢাকের বোল?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০৪
Share:

প্রতীকী চিত্র

দশমী, বিষাদের দিন। ঢাকের তালে মন বলে ওঠে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’। কী ভাবে জন্ম হয়েছিল বিসর্জনের ঢাকের বোলের?

Advertisement

ধনীর যে কখন কী খেয়াল চাপে, কেউ বলতে পারে না! তেমনই এক খেয়ালে জন্ম নিয়েছিল বিসর্জনের ঢাকের বোল। শোভাবাজার অঞ্চলে বসবাস ছিল কয়েক পুরুষের বড়লোক দত্তদের। দত্তবাড়ির চূড়ামণি দত্ত ছিলেন সেকালের ধনী, দানবীর। কিন্তু অর্থের বড্ড অহঙ্কার ছিল! সবাই তাঁর কাছে ‘শালা’! যাঁকে পারতেন ‘শালা’ বলে ডাকতেন। এই ডাক সহ্য করতে পারলেই কেল্লাফতে! চাকর-বাকরদের অভাব ছিল না।

চূড়ামণি দত্ত পাল্কি চেপে অফিস যাতায়াত করতেন। এক দিন গিয়েছেন অফিসে। লেখার জন্য খাগের কলম কাটতে শুরু করলেন তিনি। আচমকা বেখেয়ালে তাঁর আঙুল কেটে রক্ত বেরোল। চূড়ামণি লাফিয়ে উঠলেন। চূড়ামণির রক্তপাত! কর্মচারীদের হুকুম দিলেন ‘শিগগির বেহারা ডাক’। বাড়ি যাবেন। চূড়ামণির শরীর থেকে সেই প্রথম রক্তপাত। পাল্কি এল। চড়ে বসলেন তাতে।

Advertisement

ফিরেই দত্তবাড়ির স্ত্রীলোকদের নাওয়া-খাওয়া সেরে নেওয়ার ফরমান জারি করলেন চূড়ামণি। দেওয়ানকে হাঁক দিলেন। খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে সে এসে হাজির। হুকুম হল, একশো জন ঢাকি চাই। বিনা বাক্যব্যয়ে ঢাকিও হাজির। এ বার হুকুম, খাটে বিছানা পেতে দিতে হবে। গরদের কাপড় পরে, মাথায় নামাবলী জড়িয়ে চূড়ামণি খাটে উঠে পড়লেন। নিজের গায়ে-মাথায় দুর্গা, কালী, রাম, হরির নাম লিখে দিতে নির্দেশ দিলেন। ঢাকিদের উদ্দেশ্যে হাঁক পেড়ে বললেন, বিসর্জনের বাজনা বাজানো যাবে না। নয়া বোল বাতলে দিলেন চূড়ামণি। বললেন, এই বোলে তাল দিয়ে বাজাবি। বোল দিলেন,

‘দুনিয়া জিনিয়া চূড়া

যম জিনিতে যায়,

তোরা দেখবি যদি আয়।

যম জিনিতে যায় রে চূড়া

যম জিনিতে যায়।’

চূড়ামণির খাট উঠল, সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠল একশো ঢাক। ঢাক বাজছে, চূড়ামণি হাততালি দিতে দিতে গাইছেন, ‘যম জিনিতে যায় রে চূড়া, যম জিনিতে যায়’। যাওয়ার পথে শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেবকেও আওয়াজ দিয়ে গেলেন। গঙ্গার ঘাটে গিয়ে পৌঁছল শোভাযাত্রা। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তত ক্ষণে। লোকে লোকারণ্য। চূড়ো আদেশ দিলেন, খাট সমেত জলে নামাও। জলে নামিয়ে ধ্বনি দিতে লাগল, ‘গঙ্গা নারায়ণ ব্রহ্ম’। চূড়ো গঙ্গাজল মাথায় দিয়ে বললেন, ‘এসো যম, তোমার আজ পরাজয়’। তার পরই চূড়ামণির ভবের খেলা সাঙ্গ হল। গঙ্গা তীরে জয়ধ্বনি উঠল, জয় যম-বিজয়ী চূড়ামণি দত্তের জয়!

এ ভাবেই বিসর্জনের বাজনার নতুন বোলের জন্ম হল। এই তালে আজও বিসর্জনের বাজনা বাজে... ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ... ঠাকুর যাবে বিসর্জন’।

তথ্যঋণ:

সেকালের কথা-জলধর সেন

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement