প্রতীকী চিত্র
পুজোর ভোরে শঙ্খ বাজতেই গ্রাম ভরে ওঠে ঢাকের তালে। আসানসোলের ঊষা গ্রামের নিউ ঘুসিক গ্রামে কিন্তু দৃশ্যটা খানিক আলাদা। মাটির প্রতিমার বদলে দুর্গা রূপে পুজো হয় এক উই ঢিবিকে। প্রায় দু’শো বছর ধরে এই রীতি মেনে চলেছে হাজরা পরিবার।
পরিবারের প্রবীণ সদস্য কার্তিক হাজরার কাছ থেকে জানা যায় এর পেছনের রহস্য। বহু বছর আগে এক পুজোর রাতে ঘটেছিল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। নৈবেদ্য সাজানো ছিল প্রতিমার সামনে, হঠাৎ প্রদীপের শিখা থেকে প্রতিমার চুলে আগুন ধরে যায়। চুল পুড়ে যাওয়ায় সেই প্রতিমা আর পুজোর যোগ্য থাকে না। এর পর থেকে প্রতিমা গড়ে পুজো দেওয়া বন্ধ করে দেয় হাজরা পরিবার। শুরু হয় ঘট পুজো।
হরিপদ হাজরার পর এই পুজোর ভার আসে দিবাকর হাজরার কাঁধে। তিনি এক দিন লক্ষ্য করেন, দুর্গা মন্দিরের চাতালে হঠাৎ একটি উইয়ের ঢিবি তৈরি হয়েছে। দিন দিন সেটি বড় হতে থাকে। পোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে তিনি উইয়ের ঢিবিটি নষ্ট করার কথা ভাবেন। বলা হয়, সেই রাতেই দেবী দুর্গা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং নির্দেশ দেন ওই উইয়ের ঢিবিকেই মাতৃজ্ঞানে পুজো করতে। দিবাকর চমকে ওঠেন যখন তিনি দেখেন, সেই মূল ঢিবির পাশে আলাদাভাবে গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং কার্তিকের মুখের আদলে আরও কয়েকটি ঢিবি তৈরি হয়েছে। এর পর আর দেরি করেননি দিবাকর। উইয়ের ঢিবির চারপাশে কাপড় পরিয়ে শুরু হয় দেবীর পুজো।
আজও এই নিয়ম মেনে পুজোর সব আচার পালন করা হয়। ঢিবির সামনে ঘট স্থাপন করে চলে পুজো। সপ্তমী তিথিতে বাঁশ এবং কাপড় দিয়ে তৈরি নৌকার মতো দোলার ওপর চাপিয়ে আনা হয় নবপত্রিকা। মহাষ্টমীর দিন ছাগ বলি দেওয়া হয়। আর দশমীর দিন ঘট বিসর্জন দিয়ে পুজোর সমাপ্তি হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।