History of Bodhon

বোধন ছাড়া দুর্গাপুজো শুরুই হয় না, কিন্তু জানেন এই রীতি কী বা কেন হয়?

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে বোধন। কিন্তু কী এই প্রথা? কেন হয় জানেন?

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২১
Share:

প্রতীকী চিত্র

।।বোধন।।

Advertisement

” বিল্ববৃক্ষমূলে দেব্যাঃ বোধনম্”

ষষ্ঠীর সন্ধ্যা। মস্ত দু'খানা প্রদীপের আলোয় আলো হয়ে আছে মণ্ডপের সামনে পোঁতা বেল গাছটির শাখাপ্রশাখা। এয়ো নারীদের ( সধবা) দল এসে জড়ো হয়েছেন বেলতলায়। উলুধ্বনিতে মুখরিত হল প্রাঙ্গণ। উমা এসেছেন, বেল বরণের পরে হবে দেবীর বোধন।

Advertisement

আচ্ছা, কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কেন এই বোধন হয়? কী তার তাৎপর্য? কেনই বা বোধন অনুষ্ঠান করা হয় পুজো শুরুর আগে?

বোধন কথাটি মূলত চলিত। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ব্যাপী বিরাট কর্মকাণ্ডের সূচনাকারী পুজো বলে ‘বোধন’ হিসেবে পরিচিত। মূল শাস্ত্রীয় শব্দটি হল ‘কল্পারম্ভ’।

কল্প— বৈদিক প্রথাগত, ধর্মগঠিত ক্রিয়া এবং উৎসব

আরম্ভ— সূত্রপাত

এই বোধন বা কল্পারম্ভের উদ্দেশ্যে হল দেবীর ঘুম ভাঙানো। শাস্ত্রবিদেরা বলছেন, বছর হল দেবতাদের অহোরাত্র। অর্থাৎ ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত। মাঘ থেকে আষাঢ় মাস হল দিন এবং শ্রাবণ থেকে পৌষ হল রাত। রাত মানেই হল ঘুমের সময়। তখন দেবীর ঘুম ভাঙানো নিষ্ঠাভরে হওয়া উচিত। আচমকা হাঁকডাক করে ঘুম ভাঙালে, তিনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। তাই এই কল্পারম্ভ বা বোধন পুজোর অবতারণা। দীর্ঘকাল ধরে ধীরলয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে একটু একটু করে ঘুম ভাঙাতে হবে দেবীর।

তবে এই বোধনেরও ভাগ আছে। বংশানুক্রমে যে বাড়িগুলিতে দেবীর পুজো হয়ে আসছে, তারা মূলত দুই প্রকার বোধনের অনুসারী হন-

১. নবম্যাদি কল্পারম্ভ ২. প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ

১. নবম্যাদি কল্পারম্ভ — ১৩ দিনের পুজো।

কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী পর্যন্ত ১৩ দিনের পূজার্চনা।

( সাজার আটচালার পুজো, এখানেই সবিস্তারে প্রকাশিত)

২.প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ— ৬দিনের পুজো।

মহালয়ার অমাবস্যার পরদিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠীর দিন।

শাস্ত্রে আর একটি বোধনের বিধান দেওয়া আছে বারোয়ারি মণ্ডপ বা সর্বজনীন পুজোর জন্য। কারণ, সেখানে দেবীর বোধন ১৩ দিন বা ৬ দিন ধরে করা সম্ভব নয়। তাই ষষ্ঠীর দিনেই সারা হয় বোধন। সেই বোধনের নাম ‘ষষ্ঠ্যাদি বোধন’।

আশপাশে যত বারোয়ারি পুজোমণ্ডপ, সর্বত্র এই রীতিকে অনুসরণ করে দেবীর নিদ্রাভঙ্গ করা হয়। বলা হয়– হে ঊষা, হে মা, হে ধরিত্রী দুহিতা মাতা, তুমি উদয় হও, প্রকাশ হও। শস্য দাও, প্রাণ দাও, আলো দাও।

” সহ বামেন ন উষো বি উচ্ছা দুহিতর্ দিবঃ/ সহ দ্যুম্নেন বৃহৎ বিভাবরী রায়াদেবী দাস্বতী ।। ”

ঋক বেদ, ১.৪৮.১

তথ্যসূত্র —

বিচিত্র দেবতা ( প্রবন্ধ সঙ্কলন) সঙ্কলক অজ্ঞাত, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ

পঞ্জিকা ও পুরোহিত দর্পণ

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement