Kolkata festivals

কেবল বিশ্বকর্মা পুজো নয়, ভাদ্র সংক্রান্তি মানেই একঝাঁক পুজো-পার্বণ

ভাদ্রর শেষ দিন একগুচ্ছ উৎসব নিয়ে আসে। গ্রাম বাংলা থেকে শহর মেতে ওঠে নানা পুজো-পার্বণে।

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২৭
Share:

প্রতীকী চিত্র

ফি মাসের সংক্রান্তি মানেই বাংলার কোনও না কোনও উৎসব, ব্রত, পালা-পার্বণ। ভাদ্রের শেষ দিনে একঝাঁক উৎসব পালিত হয় বাংলায়। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনা হয়। কলকারখানার শ্রমিক থেকে গ্যারেজের মেকানিক, দর্জি থেকে গাড়ির চালক সব্বাই এদিন দেবশিল্পীকে তুষ্ট করতে পুজোর আয়োজন করেন। এমনকী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতেও কন্দর্পকান্তি বিশ্বকর্মার আরাধনা হয়।

Advertisement

লোকায়েত বঙ্গে এই দিনটিতে মনসারও পুজো হয়। মা মনসা মূলত গ্রামীণ বাংলার দেবী। গঙ্গাপুজো অর্থাৎ জৈষ্ঠ্যের দশহরা থেকে ডাক সংক্রান্তি অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তি পর্যন্ত নানা তিথিতে সর্পের দেবীর পুজো হয়। ভাদ্র সংক্রান্তিতেও জগদ্গৌরী মনসা পুজো পান।

ভাদ্র সংক্রান্তির আর এক বড় উৎসব হল রান্না পুজো। এ দিন বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়। যা মা মনসাকে নিবেদন করা হয়। সংক্রান্তির পর দিন অরন্ধন। পাক ঘরের বিশ্রামের দিন। জ্বলে না উনুন। আগের দিনের বাসি রান্না খাওয়া হয়, ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া। ভাদ্র সংক্রান্তির রান্না পুজোকে বুড়ো রান্না বা বুড়ো রান্না পুজো বলে। এ দিন ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ রান্না করার রেওয়াজ রয়েছে। এ ছাড়াও ওল ভাজা, টক, কচুশাকের তরকারি রান্না হয়। জলে ভেজানো বাসি ভাতের সঙ্গে তরকারি, মাছ খাওয়া হয়। কেউ কেউ একে আটাশে রান্না বা ধরাটে রান্নাও বলে।

Advertisement

ভাদ্র মাস হল ভাদুর মাস। সংক্রান্তির দিনে রাঢ় বাংলা, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ও বিহার, ঝাড়খণ্ডের দু’-একটা জেলায় ভাদু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ভাদু হল লোক-উৎসব। মনে করা হয়, ‘ভাদ্র’ মাস থেকে ভাদু শব্দটি এসেছে। আবার লৌকিক গবেষকদের মতে, ভাদু মানে লক্ষ্মী। একে মাতৃ আরাধনার ধারায় ফেলা যেতে পারে। বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় ভাদুর জন্য মস্ত জিলিপি বানানো হয়। মেলা বসে। পেল্লায় জিলিপির আকার নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে জোর টক্কর হয়।

বৃহত্তর মানভূম অঞ্চলে ভাদ্র সংক্রান্তির দিন পালিত হয় ছাতা পরব। প্রায় ৫০০ বছর যাবৎ এই উৎসব চলছে। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ দিনে পঞ্চকোট রাজপরিবারের সদস্যদের হাতে এক সুবিশাল সাদা ছাতা খোলার মধ্যে দিয়ে আজও এ উৎসবের সূচনা হয়। বলা হয় ছাতাটি ইন্দ্রদেবের। শালকাঠের খুঁটির মাথায় বাঁশের গোলাকার খাঁচা তৈরি করে কাপড় দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। ছাতা উত্তোলনের জায়গাকে বলা হয় ছাতাটাঁড়। এই দিন রাজা ঘোড়ার পিঠে চড়ে, রাজবেশে ছাতাটাঁড়ে আসেন। পুরোহিত ইন্দ্রদেবের পুজো করেন। তারপর রাজা ছাতা উত্তোলন করেন। পরদিন ছাতা নামানো হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের রোহিণী নক্ষত্রে মর্ত্যে আগমন ঘটে দেবরাজ ইন্দ্রের। ভাদ্র পূর্ণিমার দিন তিনি স্বর্গে ফেরেন। তার ন’দিন পর কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমীতে ইন্দ্রদেবের সম্মানে ছাতা তোলা হয়। যা ছাতা-পরব নামে পরিচিত। আদপে এটি শস্য-উৎসব। ‘চাকলতোড়ের ছাতা রে/মেলা দেখিতে লোক চলে কাতারে কাতারে’। পুরুলিয়ার টামনায়, চাকলতোড় ছাতার মাঠে ফি বছর ভাদ্র মাসের শেষ দিনে পালিত হয় ছাতা পরব। মেলা বসে। চাকলতোড় রাজ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের কোনও একজন প্রতিনিধি ছাতা তোলেন।

সংক্রান্তির একগুচ্ছ উৎসব পেরিয়ে আশ্বিন আসে। পচা ভাদরের গরম শেষে শিশিরের দিন আরম্ভ হয়। বছরভর অপেক্ষার পর অনুষ্ঠিতব্য দুর্গোৎসবের চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement