Goddess Lakshmi's Vahana

কী ভাবে প্যাঁচা হয়ে উঠল মা লক্ষ্মীর বাহন? কী বলছে পুরাণ?

এত প্রাণী থাকতে কী করে প্যাঁচাই হয়ে গেল দেবী লক্ষ্মীর বাহন? জেনে নিন সেই কাহিনি।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১০
Share:

প্রতীকী চিত্র

হিন্দু ধর্মে দেবদেবীদের বাহন শুধুই তাঁদের পরিবহণের মাধ্যম নয়— সেগুলি তাঁদের শক্তি ও বার্তার প্রতীক। মা লক্ষ্মী যেমন সম্পদ, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী। তাঁর বাহন হল প্যাঁচা। দেবীর এই বাহন নির্বাচন একেবারেই কাকতালীয় নয়, বরং গভীর প্রতীকী অর্থ বহন করে। কিন্তু কী করে প্যাঁচা হয়ে উঠল দেবী লক্ষ্মীর বাহন, জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।

Advertisement

পুরাণ কাহিনি বলে– যখন প্রকৃতি এবং পশুপাখির সৃষ্টি হয়, তখন প্রত্যেক দেব-দেবী নিজের বাহন বেছে নিচ্ছিলেন। মা লক্ষ্মীও নিজের বাহন বেছে নিতে মর্ত্যে আসেন। পৃথিবীর সব পশু-পাখি তাঁর বাহন হওয়ার জন্য আবেদন জানায়। মা লক্ষ্মী বলেন, তিনি কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মর্ত্যে ভ্রমণ করবেন। সে দিন যে পশু বা পাখি সবার আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসবে, তাকেই তিনি বাহন হিসাবে বেছে নেবেন। সকলেই এক কথায় রাজি। কিন্তু অমাবস্যার সেই রাত ছিল ভীষণ অন্ধকার। তাই কোনও পাখি বা পশুই রাতে মা লক্ষ্মীর কাছে আসতে পারেনি। ব্যতিক্রম হয় প্যাঁচা। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে যখন মা লক্ষ্মী মর্ত্যে এসে নামেন, তিনি দেখেন, শুধুমাত্র প্যাঁচা অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। ফলে তাকেই বাহন হিসাবে বেছে নেন দেবী।

তবে এই একটি মাত্র গল্প নয়। পুরাণে রয়েছে এমন আরও অনেক ব্যাখ্যা। এমনও উল্লেখ আছে যে, যখন সমুদ্র মন্থনে দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়, তখন তাঁর সঙ্গে প্যাঁচাও উদ্ভূত হয়। সে দেবীর সঙ্গী হয়ে তাঁর বাহনরূপে পরিচিত হয়।

Advertisement

মা লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা। এর পিছনে কিছু প্রতীকী অর্থ রয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। যেমন প্যাঁচা রাতের অন্ধকারে দেখতে পায়— ফলে দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও সতর্কতার প্রতীক। সম্পদ রক্ষা করতে যেমন সতর্কতা দরকার, প্যাঁচা সেই সতর্কতা ও বিচক্ষণতার রূপক। এই কারণেই পুরাণে তাকে দেবী লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

এর পাশাপাশি প্যাঁচার রূপকের আড়ালে সম্পদের সঠিক ব্যবহার শেখানো হয় বলেও মনে করেন কেউ কেউ। ধন বা সমৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে তা সঠিক ভাবে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্যাঁচার নিঃশব্দে উড়ে বেড়ানোর রূপকের আড়ালে এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, প্রকৃত সম্পদ প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং শান্ত সংযমের সঙ্গে রক্ষা করার জন্য।

হিন্দু ধর্মে প্রকৃতি এবং প্রাণীদের রক্ষা করতে দেবদেবীদের রূপকের আড়ালে নানা বার্তা থাকে বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে। সেই সূত্রেই দেবী লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে প্যাঁচাকে বেছে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের মত। কারণ, রাতে বেরোয় বলে কিছু অঞ্চলে প্যাঁচাকে অশুভ হিসেবে ধরা হয়। দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে সংযোগ আসলে সেই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙে। অন্ধকার বা অজ্ঞতার মাঝেও প্রজ্ঞা ও আলো খুঁজে পাওয়া যায়– এমন বার্তা দিতেই প্যাঁচাকে বাহন রূপে বেছে নেওয়া বলে মনে করেন অনেকেই।

গ্রামবাংলায় আবার আর এক ধরনের বিশ্বাস আছে। মনে করা হয়– যে ঘরে প্যাঁচা আসে, সেখানে লক্ষ্মীর আগমন ঘটে। কারণ ধান ক্ষেতে প্যাঁচা ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে— যা কৃষকদের কাছে আশীর্বাদের মতোই।

শেষে বলা, মা লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা। এই রূপকের আড়ালে শাস্ত্র মনে করিয়ে দেয়, সম্পদ কেবল বাহ্যিক নয়— এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জ্ঞান, সতর্কতা ও নৈতিকতা। প্যাঁচা তাই শুধু পাখি নয়, বরং দেবীর বার্তা বহনকারী এক প্রতীক, যা যুগ যুগ ধরে হিন্দু সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement