প্রতীকী চিত্র
উন্মুক্ত কেশদাম
“মুক্ত কর মা মুক্তকেশী ভবে যন্ত্রণা পাই দিবানিশি।”
উন্মুক্ত কেশদাম দেবীর মায়া এবং বৈরাগ্যের প্রতীক। ভীষণ কালো কেশ মায়া জালে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। দেবীর পশ্চাতে কেশরাশি দ্বারা সবই অবরুদ্ধ। অর্থাৎ, তিনিই শুরু, তিনিই শেষ। তাঁকে অতিক্রম করে কেউ পশ্চাতে যেতে পারে না। এই কেশরূপ মায়ায় ভ্রমিত হয়।
"সৃষ্টিস্থিতি বিনাশাং শক্তিভূতে সনাতনী...."
আবার, দেবী মুক্তিদায়িনী। তাই মুক্তকেশী। মুক্তকেশ সেই চিরবৈরাগ্য। মা জ্ঞানখড়গ দ্বারা লৌকিক বা জাগতিক সকল বন্ধন ছিন্ন করেন। অষ্টপাশ ছিন্ন মানুষ নিষ্কাম হন।
শ্রী শ্রী চণ্ডী বলছে, ত্রিদেব ও সমস্ত দেবগণের পুঞ্জীভূত তেজরাশি কেন্দ্রীভূত হয়ে ভগবতী মহামায়ার সৃষ্টি। যমের তেজে সৃষ্ট দেবীর কেশরাশি।
অর্থাৎ, আলুলায়িত কেশ মৃত্যুর প্রতীক। এখানে আমি-র মৃত্যু হচ্ছে। তবেই, বৈরাগ্য সাধন ও মা প্রাপ্তি।
মুণ্ডমালা
“যত শোন কর্ণপুটে সকল মায়ের মন্ত্র বটে।
কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী বর্ণে বর্ণে নাম ধরে।”
~ রামপ্রসাদ
মুণ্ডমালা হল জ্ঞানশক্তির প্রতীক। দেবী ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করেন। তিনি চেতনা দান করেন। অন্ধকারে আবদ্ধ জীবকে আলোর পথ দেখান।
দেবীর গলায় পঞ্চাশটি মুণ্ডের মালা আদতে বর্ণমালা
(স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ)। বাকের অধিশ্বরী তিনি। মন্ত্রও তাঁর, কু কথাও তাঁর, প্রশংসাও তাঁর — জগতের সমস্ত চলা এবং বলা কিছুই তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আর হাতে ধরা ওই একটি মুণ্ড হল আদিধ্বনি, মহাপ্রণব উচ্চারণ— ওমকার। ওমকার ধ্বনি তাঁরই হস্তধৃত।
কামধেনু তন্ত্রে দেবী স্বয়ং বলেছেন,
“মম কণ্ঠে স্থিতং বীজং পঞ্চাশ বর্ণমদ্ভুতম্।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।