১। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই শক্তির জয়ধ্বনি শোনা যায়। আর সেই শক্তির এক অবিস্মরণীয় রূপ হলেন দেবী দুর্গা। তিনি কেবল এক জন দেবী নন। তিনি আদিশক্তি, স্বয়ং মহাদেবেরই অংশ।
৩। মহাদেবের তৃতীয় নয়ন যেমন জ্ঞানের প্রতীক, দেবীর ত্রিনয়ন বহু প্রতীকের বাহক। কাঞ্চনবর্ণা, ত্রিলোচনা-রূপিণী দেবী দুর্গার নয়নে লুকিয়ে আছে গভীর তত্ত্ব।
৪। দেবীর বাম চোখ চাঁদের প্রতীক— যা মন, ইচ্ছে ও অনুভবকে প্রকাশ করে।
৫। ডান চোখ সূর্যের প্রতীক— যা কর্ম, শক্তি ও ধৈর্যের দিশা দেখায়।
৬। তৃতীয় নয়ন অগ্নির প্রতীক— যা জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও চেতনার আলোকবর্তিকা।
৭। শিবতত্ত্বে এই তৃতীয় নয়নকে বলা হয়েছে মনের উচ্চ ভাব ও শুদ্ধতার প্রকাশ। মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ হলে তিনি তৃতীয় নয়ন উন্মিলিত করে দগ্ধ করেছিলেন কামদেবকে। অর্থাৎ, বাসনার দহন ও জ্ঞানপ্রাপ্তির পথই এই নয়নের মাধ্যমে সুগম।
৮। শ্রী দুর্গা সপ্তসতীর চণ্ডী মন্ত্রে লেখা আছে, ‘সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে, শিবে সর্বার্থ সাধিকে, শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।’ এখানে দেবীকে সম্বোধন করা হয়েছে শিবাংশ রূপে, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মঙ্গলময়ী।
৯। বিশ্বাস বলে, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জ্ঞানচক্ষু অবস্থান করে, যদিও তা সুপ্ত থাকে। সঠিক সময়েই তা উন্মিলিত হয়। আর তখনই প্রকাশিত হয় শিক্ষার আলো।
১০। মায়ের ত্রিনেত্র কেবল দেবত্ব নয়, মানুষের আত্মার জাগরণকেও চিহ্নিত করে। মনের ইচ্ছে, কর্মের সাধনা আর জ্ঞানের আলোক— এই তিনের মেলবন্ধনই জীবনের সম্পূর্ণতা।
১১। তাই দুর্গাপুজো শুধু দেবীর আগমনী উৎসবই নয়, তাঁর নয়নের গভীর অর্থও স্মরণ করায়— জীবনের প্রতিটি অন্ধকারকে আলোকিত করার শক্তি লুকিয়ে আছে জ্ঞানের আগুনে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।