প্রতীকী চিত্র
সামনে অথৈ জল, মহাসমুদ্র! কী ভাবে জলরাশি পেরিয়ে লঙ্কা পৌঁছবে রামের বানর সেনা? সীতা উদ্ধার হবেন কোন উপায়ে? ভারতের শেষ প্রান্তে সাগর তীরে দাঁড়িয়ে ভেবে চলেছেন বিচলিত রাম। অসহায়, নিরুপায় তিনি। তবে কি সীতার সঙ্গে আর তাঁর দেখা হবে না?
তার পর কিষ্কিন্ধ্যার বিখ্যাত স্থপতি নলের দ্বারস্থ হলেন শ্রীরামচন্দ্র। দুই ভাই নল আর নীল, রামের পাশে দাঁড়ালেন। রামেশ্বরম থেকে লঙ্কা পর্যন্ত সমুদ্রের উপর গড়ে দিলেন সেতু। সেই সেতুর সাহায্যে রাম বানর সেনা সহ লঙ্কায় পৌঁছন এবং লঙ্কাধিপতি রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। এই সেতুই রাম সেতু বা নল সেতু নামে পরিচিত। নল আর নীল না-থাকলে শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কা-জয় কী উপায়ে সম্ভব হত তা কেবল বাল্মীকিই জানেন!
এই নল আর নীল বানর রূপে জন্মগ্রহণ করলেও, আদতে তাঁরা হলেন বিশ্বকর্মার পুত্র। বিশ্বকর্মা পাঁচ পুত্রের জনক। তাঁর কন্যা সংজ্ঞার কথাও জানা যায়। সংজ্ঞার স্বামী ছিলেন সূর্যদেব। অপর দিকে, বিশ্বকর্মার দুই বানররূপী পুত্রের কথা রামায়ণে পাওয়া যায়।
রাবণ নিধনের উদ্দেশে ভগবান বিষ্ণু রাম অবতারে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রহ্মার নির্দেশে রাবণ বধে রামকে সহায়তা করতে অন্য দেবতারাও বানররূপে জন্মগ্রহণ করেন। তবে নল ও নীলের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এক বানরীর রূপ-যৌবনে মত্ত হয়েছিলেন বিশ্বকর্মা। বানরীর গর্ভজাত ও বিশ্বকর্মার ঔরসজাত দুই সন্তান হলেন নল ও নীল। বানর হয়ে জন্মালেও দুই ভাই স্থাপত্য শিল্পে বিশ্বকর্মার মতোই পারদর্শী ছিল। ডিএনএ বলেও তো একটি বস্তু রয়েছে, পিতার সব গুণ পেয়েছিলেন নল ও নীল।
বিশ শতকের কলকাতা ও গ্রাম বাংলায় বিশ্বকর্মার মূর্তির সঙ্গে দু’জন পুরুষকে দেখা যেত। মাঝে বিশ্বকর্মা, দু’পাশে বাবু বেশে দুই পুরুষ মূর্তি; সব মিলিয়ে তিন জন। অন্য দু’জন হলেন নল আর নীল। দেব শিল্পীর বানররূপী পুত্রেরা বাংলার পটুয়াদের কল্যাণে মানুষের বেশ পেয়েছিল। সেই মূর্তির চল আর নেই। কালে কালে বিশ্বকর্মা ঈশ্বরের চেয়েও যেন বেশি করে শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন বাংলায়। হংসরাজের বদলে তাঁর বাহন হয়েছে মালবাহী হস্তী। পুস্তক, অক্ষমালা, শঙ্খের পরিবর্তে তাঁর হাতে উঠে এসেছে দাঁড়িপাল্লা, হাতুড়ি। বিবর্তনের এই সফরে দু’পাশে থাকা দুই পুরুষ-মূর্তিও লোপ পেয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।