বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা এবং অষ্টম বসু প্রভাসের পুত্র বিশ্বকর্মা হলেন দেব শিল্পী, কারিগর-শ্রেষ্ঠ। ঋগবেদ অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা সৃষ্টির দেবতা। তিনিই ব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা, বিশ্বভুবনের নির্মাতা।
পৌরাণিক কাহিনি মতে, যুগে যুগে তিনি একের পর এক বিস্ময়কর স্থাপত্য নির্মাণ করে গিয়েছেন। সত্যযুগে স্বর্গ, ত্রেতাযুগে লঙ্কা, দ্বাপর যুগে দ্বারকা ও কলিযুগে হস্তিনাপুর।
শ্রীকৃষ্ণের জন্য দ্বারকা নির্মাণ করেন দেব শিল্পী। তিনি স্বর্গলোকও নির্মাণ করেছিলেন। আবার বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা। শিব-পার্বতীর জন্য প্রাসাদ গড়েছিলেন বিশ্বকর্মা। সে প্রাসাদ ছিল সোনার। প্রাসাদের গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য ব্রাহ্মণ-শ্রেষ্ঠ, পরমভক্ত রাবণকে আমন্ত্রণ জানান শিব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের থেকে স্বর্ণলঙ্কা চান ঋষি রাবণ।
রাবণের হাতে বিশ্বকর্মার বানানো স্বর্ণলঙ্কার অধিকার তুলে দেন শিব। তখন থেকেই রাবণের রাজধানী স্বর্ণলঙ্কা। আর একটি মত অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা সোনার লঙ্কা বানিয়েছিলেন কুবেরের জন্য, যা রাবণ কুবেরকে হারিয়ে দখল করে নেন।
ঋষি অগস্ত্যের ভবন, কুবেরের অলকাপুরী, কৌরব এবং পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুরও তাঁর সৃষ্টি। শ্রীকৃষ্ণের অনুরোধে বিশ্বকর্মা পাণ্ডবদের জন্য তৈরি করেছিলেন ইন্দ্রপ্রস্থ।
পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির এবং জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারু মূর্তিও বিশ্বকর্মার হাতে গড়া। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, বেহুলা-লখাইয়ের লৌহ-বাসর গড়ে দিয়েছিলেন তিনিই।
কেবল স্থাপত্য নয়, দেব-দেবীর অস্ত্রও নির্মাণ করেছেন বিশ্বকর্মা। দেবাদিদেব শিবের ত্রিশূল, ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্র, কুবেরের অস্ত্র, দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র ধনুক, হনুমানের গদা, যমরাজের কালদণ্ড, কর্ণের কবজ-কুণ্ডল সবই তাঁর সৃষ্টি।
দেবতাদের জন্য আকাশ যান, উড়ন্ত রথ, পুষ্পক রথ, ভূষণ বানিয়ে দেন তিনি।
রামায়ণের আদি কাণ্ডে রয়েছে, বিশ্বকর্মা এক জোড়া ধনুক বানিয়েছিলেন, একটি দিয়েছিলেন শিবকে। শিব-ভক্ত শ্রীরামচন্দ্র শিবের হরধনু ভেঙেই সীতাকে বিয়ে করেছিলে।
আর্যাবর্তের সমস্ত শিল্প কাজেই বিশ্বকর্মার হাতের ছোঁয়া রয়েছে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।