প্রতীকী চিত্র
অনেকেই বলেন, সেই ভোরবেলা তো দশমী ছেড়ে গিয়েছে। সারা দিন জুড়েই একাদশী, তা হলে বিজয়া দশমী কেন? আর কী হিসেবেই বা বিজয় দশমী পালন করব?
"উদয়ে দশমী কিঞ্চিৎ সম্পূশৈকাদশী যদি।
শ্রবণর্থং যদাকালে সা তিথিবিজয়াডিধা।।"
( চতুর্বর্গচিন্তামণি)
অর্থাৎ, যদি সুর্যোদয় কালে দশমী তিথি অল্পও থেকে থাকে এবং বাকি সম্পূর্ণ দিন ধরে একাদশীও হয়, তাতে সমস্যা নেই। শ্রবণা নক্ষত্রযুক্ত সেই কালটিই বিজয়া। এ কারণে এই তিথিটি বিজয়া দশমী-রূপে প্রসিদ্ধ।
তবে শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না।
বিজয়া নামের অন্য তাৎপর্যও আছে। আর একটি শ্লোক বলছে,
'ইয়ং বিজয়যোগকারণাদ্বিজয়া দশমীতাচাতে'-
অর্থাৎ, এই তিথির সঙ্গে বিজয় বা জয়যুক্ত হওয়ার একটি সংযোগ রয়েছে। তাই এই তিথি বিজয়া দশমী নাম পেয়েছে। সচরাচর আগেকার দিনে রাজারা দশমী তিথিতে পূজা সেরে হাতে অপরাজিতা লতা বেঁধে বিজয়যাত্রায় বা দিগ্বিজয়ে বার হতেন। এবং তাঁরা অপরাজেয় থাকতেন।
মুহূর্তচিন্তামণি গ্রন্থও পুরাতন শ্লোকটিকেই পুনরুচ্চারণ করছে– আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষের শ্রবণা নক্ষত্রযুক্ত দশমী তিথি বিজয়া বলে খ্যাত। এই তিথি সকল শুভকর্মে সিদ্ধিদাত্রী এবং রাজাদের পক্ষে যাত্রায় জয় ও সন্ধিদায়িনী।
এমনকি স্মার্ত রঘুনন্দন বলছেন, দশমী ত্যাগ করে যুদ্ধযাত্রা করলে সারা বছর তাঁর কোথাও জয় হয় না। তাই এই দিনেই যুদ্ধযাত্রা করা বাধ্যতামূলক এবং তবেই জয় আসবে ঘরে। এর অর্থ, কোনও ইপ্সা বা অভীষ্ট থাকলে দশমীর দিন থেকেই ভীষণ পরিশ্রমে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। তা হলে জয় হবেই। অযথা আলস্য বা কালক্ষেপ করলে পরাজয় নিশ্চিত।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের মতো গ্রন্থেও এই সময়কে যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অসুস্থতা বা পারিবারিক কারণে নিজেই যুদ্ধযাত্রা করতে না পারলে অন্তত একটি প্রতিনিধিকে, যেমন অস্ত্রকে বার করে রাখা উচিত।
এ তো গেল শাস্ত্রকার আর টীকাকারদের কথা। পরিষ্কার মনে করা যায়, আগেকার ঠাকুমা ও দিদিমারা বলতেন, বিজয়ার দিনেই বাড়ি ফিরে যাও। আবার লক্ষ্মীপূজায় এসো। বিজয়ের দিনে যাত্রা করলে, পরে কখনও মন্দ দিনে কোথাও যাত্রা করলেও যাত্রাদোষ হবে না।
তবে এই বিষয়ে সর্বাধিক প্রচলিত ধারণা এই যে– বিজয়া রাবণের পরাজয় এবং শ্রীরামচন্দ্রের বিজয়োৎসব। সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই সমগ্র উত্তর ভারতে 'দশহরা' বা দশেরা উৎসবে রাবণের কুশপুত্তলিকা আতসবাজি-সহ দাহ করে বিজয়োৎসব পালন করা হয়।
মহাকালসংহিতা বলছে, রাবণবধের জন্য যখন অকালবোধন করা হয়েছিল, সেই সময়ে আকুতিপূর্ণ প্রার্থনায় দেবী সন্তুষ্ট হন। তখন ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতারা নানা কথা প্রসঙ্গে দেবীর কাছে এক বিশেষ অঙ্গীকার করেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন যে, নবমীতে যখন রাবণ নিহত হবেন, তখন তাঁরা দেবীর উদ্দেশ্যে এক মহোৎসবের প্রচলন করবেন।
দেবতারা স্থির করেন যে, রাবণবধের পরে দশমীর অপরাহ্ণে এই মহোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রচুর বলি ইত্যাদির দ্বারা দেবীকে প্রসন্ন করার পরে দেবতা ও মনুষ্যরা এই নীরাজন মহোৎসব পৃথিবীতে প্রচলিত করবেন। এই উৎসবে যা যা অঙ্গ হিসেবে থাকবে:
● গীত, নৃত্য, বাদ্য
● কাদাখেলা
● অস্ত্রশস্ত্র এবং রথ-হাতি-ঘোড়ার পূজা
● সজ্জনদের অভিবাদন ও প্রেমপূর্ণ বচনাদি
এই প্রতিশ্রুতির পর থেকেই পৃথিবীতে এই প্রথা চলে আসছে । নীরাজন শব্দের একটি অর্থ হল আরতি। একইসঙ্গে, যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও হাতি-ঘোড়ার পুজোকেও নীরাজন বলা হয়। এ ভাবে দেবতাদের অঙ্গীকারে রাবণবধের পর থেকে এই ঐতিহ্যবাহী মহোৎসবের ধারা পৃথিবীতে আজও প্রবহমান।
দুর্গাপূজার 'সংকল্প' অনুসারে এই পুজো শেষ হয় মহানবমীতে হোমের পূর্ণাহতির মাধ্যমে। কিন্তু দুর্গোৎসবের শেষ তার পরের তিথি, দশমীতে। এই তিথিতে পুজোর কোনও বিশেষত্ব নেই, আছে শুধু বিসর্জনকৃত্য।
তথ্য ঋণ- উদ্বোধন
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।