প্রতীকী চিত্র।
দুর্গাপুজো, কালীপুজো পেরিয়ে এলে আসে 'ছট'পুজো। মাঠে হেমন্তের ধান তখন পেকে উঠেছে। রবি শস্যের সময় সমাগত। সূর্যের আলো, অনুকূল পরিবেশের কামনায় মানুষ প্রার্থনা জানায় সূর্য দেবতাকে।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, কার্তিক মাসের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয় ছটপুজো। ছটপুজো সূর্য ষষ্ঠী নামেও পরিচিত। বিহার উত্তরপ্রদেশ এবং সংলগ্ন অঞ্চল মেতে ওঠে ছট উৎসবে। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিহারি সম্প্রদায়ের মানুষও অংশ নেয় নিজের মতো পার্বণ উদযাপনে। তাই ছট এখন হয়ে উঠেছে বৃহৎ উৎসব।
'ছট্' পুজোতে নিহিত রয়েছে কৃষি উৎসবের বীজ। ছট্-এ পূজিত হন সূর্যদেব। সূর্যের রশ্মির পুজো। 'রশ্মি' মানেই 'ছটা', 'ছটা' থেকে 'ছট্'।
ছট্ বছরে দু’বার হয়, কার্ত্তিক এবং চৈত্র মাসে। কথিত, বনবাস থেকে ফেরার সময় শ্রীরামচন্দ্র সূর্যদেবের পুজো করেন। আর তখন থেকেই ছটপুজোর সূচনা হয়। সূর্য হলেন প্রাণ শক্তির দেবতা। তাই, ছট্ পুজোর সূচনা হয়েছিল রুক্ষ্ম প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশে জীবন রক্ষার দায়ে সূর্য উপাসনার মধ্য দিয়ে।
দুর্গাপুজোর মতোই ছটপুজোও চলে চার দিন। প্রথম দিন নহায় খায়, দ্বিতীয় দিন খরনা, তৃতীয় দিন সন্ধ্যা অর্ঘ্য, শেষ দিন সূর্যোদয় অর্ঘ্য। এই পুজোর নিয়ম বেশ কঠিন। অতি কঠোর ভাবে মেনে চলা হয় প্রতিটি নিয়ম। এক চুল এ দিক ও দিক হলেই পুজো বিধি ভঙ্গে বিপদের ভয় পান ব্রতধারী মানুষজন। সূর্যের কাছে মানত করেন ভক্তরা। প্রায় চল্লিশ ঘন্টা নির্জলা উপবাস করতে হয় তাঁদের। উৎসবের শেষ দিন সূর্যোদয় অর্ঘ্যর পর প্রসাদ খান।
ছট পুজোর আবার নানা নাম। ‘ছটি’, ‘ছট পরব’, ‘ছট পূজা’, ‘ডালা ছট’, ‘ডালা পূজা’, ‘সূর্য ষষ্ঠী’। এই পুজোয় সূর্যদেবের সঙ্গে উপাসনা করা হয় তাঁর দুই পত্নী ঊষা ও প্রত্যুষাকেও। ভক্তদের বিশ্বাস, তাঁরা সূর্যের ছটা। তাই, সূর্য দেবতা 'ছট্' হয়ে ওঠেন ভক্তদের 'ছট মাইয়া'। আর একটি মত বলে 'ছট' সূর্যের পাশাপাশি ষষ্ঠী দেবী (ছঠি মাইয়া)-র আরাধনার উৎসব। তিনি সন্তান ও মাতৃত্বের দেবী। ছটি মাইয়াকে সূর্যদেবের বোন হিসেবেও মনে করা হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।