Mahisasuramardini by Uttam Kumar

মহালয়ার ভোরে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বদলে উত্তরকুমারের কণ্ঠ, ঝড় উঠল বঙ্গে

সালটা ১৯৭৬। মহালয়ার ভোরে রেডিয়োতে বেজে উঠল না ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। সম্প্রচারিত হল নতুন একটি অনুষ্ঠান নাম ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’। কিন্তু শেষটায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিকদের ঐতিহ্যই জিতে গেল।

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১০
Share:

প্রতীকী চিত্র

১৯৭৬ সাল, জরুরি অবস্থা দেখে ফেলেছে ভারতবর্ষ। রাজনীতি, সমাজ জীবনের মতো সাংস্কৃতিক জগতেও ইমার্জেন্সির প্রভাব পড়েছিল। মহালয়ার ভোরে সে’বছর রেডিয়োতে বেজে উঠল না ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। সম্প্রচারিত হল নতুন একটি অনুষ্ঠান নাম ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’, জনমানসে যা ‘উত্তমকুমারের মহালয়া’ নামে পরিচিত। শোনা যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বদলে উত্তমকুমার অর্থাৎ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র পরিবর্ত খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল রাষ্ট্রশক্তির ইচ্ছায়।

Advertisement

‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’-র রচয়িতা ডঃ ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী, ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতিকার শ্যামল গুপ্ত আর মূল আকর্ষণ মহানয়ক উত্তমকুমারের ভাষ্যপাঠ। ভাষ্যপাঠে উত্তমকুমারের সঙ্গে বসন্ত চৌধুরী, পার্থ ঘোষ ও ছন্দা সেন। গানের ক্ষেত্রে কে নেই! হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, উৎপলা সেন, অনুপ ঘোষাল, শিপ্রা বসু, বনশ্রী সেনগুপ্ত, হৈমন্তী শুক্লা, অসীমা মুখোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য, শৈলেন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ হেন তারকাখচিত অনুষ্ঠানও ডাহা ফেল করেছিল।

১৯৭৬-র ২৩ সেপ্টেম্বর, মহালয়ার ভোরে, সাড়ে পাঁচটায় সম্প্রচার শেষ হল ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’-র। আর মিনিট ত্রিশেক পর উঠল ঝড়। টলে গেল আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ! শোনা যায়, সে ঝড়ের দাপট দিল্লির সাউথ ব্লক অবধি পৌঁছে গিয়েছিল। টেলিফোনে তিরস্কার, আকাশবাণী ভবনের সামনে ক্ষিপ্ত জনতার ভিড়, শ্রোতাদের ক্ষোভের চিঠি জমে পাহাড় তৈরি হয়ে গিয়েছিল আকাশবাণীর অফিসে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাত আটটায় ‘সবিনয় নিবেদন’ অনুষ্ঠানে ভুল স্বীকার করে বিবৃতি পাঠ করা হয়। ফিরিয়ে আনা হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

Advertisement

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিকরা যে ঐতিহ্য তৈরি করেছিলেন, তা ভাঙতে হাতিয়ার করা হয়েছিল মহানায়কের জনপ্রিয়তাকে। প্রথমে উত্তমকুমার রাজি হননি। তার পর রাজি হলেও ধন্দে ছিলেন তিনি। মহানায়ক জানতেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের বিকল্প হয় না। হলও তাই! মানুষ প্রত্যাখান করলো ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’-কে। পরাজয়ের দায় কেবল মহানায়কের নয়। তাঁর কণ্ঠ শোনা গিয়েছিল মাত্র দু-আড়াই মিনিট। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে লতা-আশা, আকাশবাণীর তৎকালীন কর্তব্যক্তিরা সকলেই ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’-র ব্যর্থতার জন্য সমান দায়ী।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement