প্রতীকী চিত্র।
কিংবদন্তী চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবার্ষিকী এ বছর। শারদোৎসবে তাই এক বিশেষ আয়োজন করছে সল্টলেক এ কে ব্লক অ্যাসোসিয়েশন। এ বার তাদের দুর্গাপুজোর থিম 'যুক্তি আর তর্ক'। ঋত্বিক যে ভাবে তাঁর প্রতিটি ছবিতে নিজের জীবন দর্শনের স্বপক্ষে যুক্তি সাজিয়ে পেশ করেছেন এবং তা নিয়ে তর্কের যথেষ্ট অবকাশও রেখেছেন, ঠিক সেই ভাবনাতেই এই পুজোর মণ্ডপ সাজিয়ে তুলছেন শিল্পী বিশ্বনাথ দে।
কিন্তু দেবী দুর্গার আরাধনার সঙ্গে কী ভাবে বরেণ্য পরিচালকের সৃষ্টির সমন্বয় সাধন করছেন শিল্পী? এই ভাবনার বিষয়ে আনন্দবাজার ডট কমকে কী জানালেন বিশ্বনাথ দে?
শিল্পী জানান, ঋত্বিক কাজ করার যেটুকু সুযোগ ও সময় পেয়েছেন, সেই সীমিত পরিসরের মধ্যেই তৎকালীন বাংলার আর্তজনের জীবনযুদ্ধের কাহিনি তুলে ধরেছেন তাঁর সমস্ত সৃষ্টিতে। কেবলমাত্র 'তুমি-আমি-ফুল-লতাপাতা' নিয়ে কোনও বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করতে চাননি। পরিচালক চেয়েছিলেন, তাঁর ছবি যেন দর্শককে এই সমাজ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর সেই প্রয়াস যে সফল, সে কথা বলাই বাহুল্য। কারণ, আজও ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে আমজনতা আলোচনা করে, বলা ভাল করতে বাধ্য হয়। কারণ, আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক।
বিশ্বনাথের আক্ষেপ, আজকের প্রজন্ম ঋত্বিককে সে ভাবে চেনে না। তারা জানে না, অসামান্য প্রতিভাধর এই মানুষটি তাঁর অধিকাংশ ছবিতে নারীশক্তির জয়গান গেয়ে গিয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্ররা মানবী হয়েও শুধুমাত্র নিজেকে এবং আশপাশের মানুষগুলোকে বাঁচানোর তাগিদে যথার্থ অর্থেই 'দশভুজা' হয়ে উঠেছেন।
ঠিক এই জায়গাতেই শারদোৎসব এবং চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকের জীবনদর্শনকে একসূত্রে বাঁধার একটা প্রয়াস। বিশ্বনাথ জানালেন, এ বারের পুজোয় তাঁরা সাবেক প্রতিমা গড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিমার চালচিত্রের পিছনের খানিকটা জায়গা নিয়ে ঋত্বিক-সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলির উপস্থিতি রাখার চেষ্টা করা হবে। যাতে সেই কল্পিত মানবীদের সঙ্গে দেবী দুর্গার সংগ্রামের মধ্য়ে একটা সাজুয্য় তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া, মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে ঋত্বিকের ছবিগুলির পোস্টার, বিভিন্ন দৃশ্যের ফ্রেমবন্দি নানা মুহূর্ত এবং পরিচালকের ভাবাদর্শ ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে নানা তথ্য। সেই সমস্ত তথ্য ছাপার অক্ষরে নয়, বরং হাতে লিখে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে, যা এক বিরাট কর্মযজ্ঞ! দর্শনার্থীরা যাতে সেগুলি পড়তে পারেন, তার জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।
তবে যদি কেউ এই তথ্যাবলী পড়তে না চান, তাঁদের জন্য মৃদু আলোয় ভিজ়্যুয়াল কোলাজ ইনস্টল করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, ঋত্বিকের ছবিতে যে ধরনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ব্যবহার করা হত, তেমন সুরই আবহ হিসাবে মণ্ডপে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিল্পী। বিশ্বনাথের আশা, এই মণ্ডপে এসে মধ্যবয়সী ও প্রবীণরা যে রকম ফের এক বার ঋত্বিককে স্মরণ করবেন, ঠিক একই ভাবে এখনকার প্রজন্মও তাঁর কথা জানতে চাইবে, তাঁর ছবি দেখতে চাইবে। আর তা যদি হয়, তবে সেটাই হবে জন্মশতবর্ষে নমস্য পরিচালকের প্রতি তাঁর সেরা শ্রদ্ধাঞ্জলি!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।