বেহালা চত্বরে ঠাকুর দেখতে এলে যেন বড়িশা ক্লাবে আসতেই হয়। প্রতি বছরই মানুষের নজর থাকে দক্ষিণ কলকাতার এই ক্লাবের উপর। তাঁদের অভিনব ভাবনা বারংবার মুগ্ধ করেছে দর্শনার্থীদের। এ বারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না সেই ইঙ্গিত মিলল পুজোর আগেই।
বড়িশা ক্লাবের এই বছরের থিম ‘শূন্য পৃথিবী’। তবে কাদের? জোকারদের।
একটা সময় সার্কাসের দারুণ রমরমা ছিল। শীতকালে শহরের একাধিক জায়গায় বসত সার্কাসের তাঁবু। কিন্তু আজ সেই চিত্র বড়ই ফ্যাকাসে।
এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সার্কাসের তাঁবু। সার্কাসের সঙ্গে জড়িত থাকা বাকি মানুষেরা জীবনের মূল স্রোতে নিজেদের মানিয়ে নিলেও, জোকারদের জন্য সেটা সহজ নয়। সেখান থেকেই এই ভাবনা বলে জানালেন বড়িশা ক্লাবের এ বারের সহশিল্পী স্বরাজ পাল।
স্বরাজ আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, বড়িশা ক্লাবের এটি ৩৭ তম বছর। তাঁদের এ বারের ভাবনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “শূন্য পৃথিবী এই অর্থে যে, বর্তমান সময়ে ধীরে ধীরে সার্কাসের তাঁবুগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে। ফলে সার্কাসের সঙ্গে জড়িত যে মানুষগুলি, যাঁদের জীবিকা এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের অনেকেই জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারছেন। কিন্তু সার্কাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন জোকাররা, এঁরা এই সার্কাসকেই তাঁদের পৃথিবী বলে মনে করে নেন।”
তিনি আরও জানান, “যখন এই সার্কাসের তাঁবুগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পর পর তখন জোকারদের পৃথিবী শূন্য হয়ে যাচ্ছে। সেই জিনিসটা আমরা আমাদের থিমের মধ্যে তুলে ধরছি।”
স্বরাজ আরও জানান তাঁরা তাঁদের থিমের মাধ্যমে বাংলার সার্কাসের ইতিহাসকে এখানে দেখানোর চেষ্টা করছেন।
বড়িশা ক্লাবের এই থিম নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ, বাটাম, লোহা, টিন, ছবি। শিল্পী জানান তাঁরা আশা করছেন, যে ছবিগুলি ব্যবহৃত হয়েছে, আঁকা হয়েছে এখানে সেগুলি মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে।
তবে এই ক্লাবের অন্যতম চমক হল সামনে থাকা একটি লরির অংশ। কিন্তু এটির অর্থ কী? এটি ব্যাখ্যা করে স্বরাজ বলেন, “আমরা সবসময় সার্কাসের সামনের দিকটা দেখে থাকি, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ঝাঁ চকচকে। কিন্তু আমরা তাঁদের ব্যাকস্টেজের কথা জানতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখানে দেখাচ্ছি যে সার্কাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যখন কিছু চলে যায়, বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেটার জিনিসপত্র কোনও গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়। তাই আমরা সার্কাসের এই চলে যাওয়া বোঝাতেই লরিটাকে দেখিয়েছি, যে এটার মধ্যে সব মালপত্র তুলে সেই গাড়ি শেষ যাত্রার দিকে এগোচ্ছে।” (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।