সংগৃহীত চিত্র।
কালীপুজো আর ভাইফোঁটা মিটতেই যেন আলোর শহর চন্দননগর ও তার লাগোয়া অঞ্চলগুলিতে নতুন করে উৎসবের বাদ্যি বেজে ওঠে। কারণ আর কিছুই নয়, আসছেন জগদ্ধাত্রী মা। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির হাত ধরে শুরু হওয়া এই পুজো আজ রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব। চন্দননগরে 'বড় মা' যেমন ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন, তেমনই ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় প্রায় আড়াইশো বছর ধরে পূজিত হচ্ছেন ‘মেজ মা’। এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে এক দীর্ঘ কাহিনি আর অগুনতি ভক্তের ভালবাসা।
তেঁতুলতলার ‘মেজ মা’র বয়স প্রায় ২৩৩ বছর। লোকমুখে শোনা যায়, এই পুজো শুরু হয়েছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সূত্রেই। তিনশো বছর আগে কৃষ্ণনগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি বাজারে 'বড় মা'কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তার কিছু বছর পরে কৃষ্ণচন্দ্রেরই আরেক দেওয়ান দাতারাম শূর ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় শুরু করেন 'মেজ মা'-এর আরাধনা। কথিত আছে, রাজা যখন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের কাছে দেনার দায়ে বন্দি, ঠিক সেই সময়েই রাজার প্রতিষ্ঠিত মাতৃমূর্তিকে নদীপথে নিয়ে তেঁতুলতলায় পালিয়ে আসেন দেওয়ান দাতারাম। সেই মূর্তিকে তিনি এখানে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। সেই থেকে আজও এই পুজো হয়ে চলেছে।
জনশ্রুতি, 'মেজ মা' খুব জাগ্রত। আর এই পুজো চলে মূলত ভক্তদের দানে, কোনও চাঁদার প্রয়োজন হয় না। আগে বলির প্রচলন থাকলেও এখন তা বন্ধ। কিন্তু মায়ের মহিমা এতটুকুও কমেনি। আজও দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত এখানে দণ্ডি কেটে পুজো দেন। বিশেষত, নবমীর দিনে ভোগের আশায় ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে।
প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয় সেই ভিড় সামলাতে। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, পুজো উপলক্ষে কয়েক দিন যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়, এবং আগের রাত থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায় দর্শনার্থীদের। সারা বছর মায়ের কাঠামো ও পট রেখে নিত্য পুজো হয় এই মন্দিরে। পুজো কমিটিই সারা বছর ধরে মন্দির পরিচালনা করে। তাই, এ বারও আলোর সাজে সেজে ওঠা 'মেজ মা'-কে দেখতে ভিড় জমাতে তৈরি সকলে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।