লালমাটির দেশ বীরভূম। পুজোর মরশুম এলেই এই জেলার বাতাসে মিশে যায় ভক্তির গন্ধ। কালীপুজোর আগে তাই চর্চায় থাকে নিরিশা মায়ের নাম।
প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের ইতিহাসে যেমন রহস্য, তেমনই ভক্তির আবেশ।
লোকমুখে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে এই নিরিশা গ্রাম ছিল জনশূন্য এক গহন জঙ্গল। এক অমাবস্যার গভীর রাতে গ্রামের মানুষ জঙ্গলের মধ্যে এক অলৌকিক আলো জ্বলতে দেখেন।
স্থানীয়রা এই খবরটি দেন গ্রামেরই এক বাসিন্দা ডম্বুর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি গিয়ে দেখেন এক অবাক করা ছবি।
কথিত, তিনি দেখেছিলেন, এক সাধক গভীর সাধনায় মগ্ন। সেই সাধকই ডম্বুরকে কালীপুজোর রীতিনীতি মেনে আরাধনা শুরু করার দায়িত্ব দেন।
পরে অবশ্য পুজোর ভার ওঠে গ্রামের রায় পরিবারের হাতে। কথিত, আগে এই পুজো হত পঞ্চমুণ্ডির আসনে।
এখনও প্রত্যেক বছর মন্দির থেকে কিছুটা দূরে দেবীর মাটির মূর্তি তৈরি করা হয়। আর কালীপুজোর দিনে চক্ষুদানের পরে মুহূর্তের মধ্যেই সেই মূর্তি আনা হয় মন্দিরের মূল আসনে।
গভীর রাতে এমন দৃশ্য দেখতে আজও সেখানে ভিড় করেন অসংখ্য ভক্ত।
তবে নিরিশা মায়ের আসল আকর্ষণ লুকিয়ে আছে এক অলৌকিক ইঙ্গিতে। প্রতি বছর প্রতিমা তৈরির কারিগর বদলে গেলেও মায়ের মুখের রূপে কোনও পরিবর্তন হয় না— একই রূপ, একই উচ্চতা আর একই ওজন বজায় থাকে বছরের পর বছর। যেন কোনও এক অদৃশ্য শক্তি দেবীর মুখমণ্ডলকে একই ছাঁচে ধরে রাখে।
বিশেষ করে স্থানীয় ও বাইরের এলাকার মহিলারা কোনও রোগ-যন্ত্রণা বা সমস্যা নিয়ে ছুটে আসেন এই মন্দিরে।
তাঁদের সরল বিশ্বাস, দেবীর কাছে মানত করলেই মেলে রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। গ্রামবাসীরা তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কালীপুজোর দিন আজও মায়ের কাছে ভিড় জমান।
৩০০ বছরের প্রাচীন এই নিরিশা মায়ের মন্দির আজও বহু অলৌকিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে, এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।