সংগৃহীত চিত্র।
কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের এই চার দিন আলোর রোশনাই আর ভক্তির অর্ঘ্যে অন্য এক রূপে সেজে ওঠে বাংলা। আর সেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল চন্দননগর। এ যেন এক প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক শিল্পকলার মনোরম মিশেল। এই উৎসবের দিনগুলিতে এখানকার প্রতিমাগুলির সুউচ্চ কাঠামো, অপূর্ব সজ্জা এবং বিখ্যাত আলোকসজ্জা দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীদের কাছে এক বিরাট আকর্ষণ।
চন্দননগরের প্রখ্যাত বড়বাজার সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো এই বছর থিমের ক্ষেত্রে এক অসাধারণ অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছে। এ বার মণ্ডপ সেজে উঠেছে বীরভূমের জীবনযাত্রা আর সাঁওতালি নাচের অনুপ্রেরণায়। লাল মাটির দেশের সরল জীবন আর ছন্দে ভরা সেই লোকনৃত্যই হয়ে উঠেছে এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কেবল থিমেই নয়, মণ্ডপের ভিতরে দেবী জগদ্ধাত্রীও সেজেছেন চোখ জুড়ানো ডাকের সাজে, যা তাঁর ঐশ্বরিক মহিমাকে আরও উদ্ভাসিত করে তুলেছে। দেবীর সেই রূপটি যেন উজ্জ্বল লাল বেনারসী শাড়িতে আরও সুশোভিত। দেবীর এই রূপ ও মণ্ডপ সজ্জার বুনন দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় কার্যত উপচে পড়ছে। এক দিকে বহু বছরের প্রাচীন বিশ্বাস আর অন্য দিকে বীরভূমের মাটির মানুষের জীবনকে শিল্পকলার মাধ্যমে তুলে ধরার এই প্রয়াস, দুই মিলিয়ে বড়বাজারের পুজো যেন একটি জীবন্ত গল্পের আকার নিয়েছে।
তবে বড়বাজারের খ্যাতি শুধু থিম বা প্রতিমার জন্যেই নয়, এখানকার আলোকসজ্জা বরাবরই বিশেষভাবে বিখ্যাত। নানা রঙ আর ছন্দের আলোর খেলা প্রতি বছরই মণ্ডপকে এক মায়াবী আবহে মুড়ে দেয়, যা রাতভর জাগিয়ে রাখে এই উৎসবকে। কালীপুজোর পর এই চার দিনের উৎসবে তাই ধর্ম আর সংস্কৃতির এমন নিপুণ মেলবন্ধন দেখতে মানুষ ছুটে আসেন। এই পুজো কেবল ধর্মীয় উপাসনা নয়, এটি বাংলার শিল্পকলা, সামাজিক সম্প্রীতি আর লোকনৃত্যের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা জানানো। এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় চন্দননগরের বড়বাজার মেন রোডে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।